নারী অধিকারেই কেন শিক্ষিতরা এতো বোধহীন?
প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০১৮, ২৩:৫৫
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত লোকদের কূপমণ্ডুকতা আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করে। ইনারা গাদা গাদা বই পড়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেন, সামাজিকতা বোঝেন কিন্তু সমাজ বোঝেন না। রাজনীতি বোঝেন, শ্রেণীবৈষম্য বোঝেন, নিজের ঘরে মেয়েদেরকে 'মোটামুটি' সম্মানও দেখান, শুধু নারী অধিকারের বিষয়টাই এদের কাছে ধোঁয়াশা। উপরের পরতটাই শুধু দেখতেই সক্ষম এরা।
প্রেমময় 'পুরুষনির্যাতনের' শিকার হয়ে সুখের ঢেকুর তোলে আহ্লাদী গলায় অভিযোগ করেন, 'পুরুষরাও তো নির্যাতিত হয়'। 'নারী নির্যাতনের জন্য নারীই দায়ী' জাতীয় কথা বলে জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করেন। আলোচনা একটু গভীরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই আল্লাহ রসুলের দোহাই পাড়তে শুরু করেন- স্রষ্টাই আমাদেরকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, আমরা কী ই বা করতে পারি?'
দশ বছরের মেয়ের, চারমাসের বাচ্চার ধর্ষণও স্রষ্টা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কী না জানতে চাইলে কবি কিঞ্চিত নীরব হয়ে যান, পরক্ষণেই বলেন, 'না না ওসব মানুষের কুকীর্তি।' নিজের সুবিধামত নিয়ন্ত্রণের বল এরা নিজের এবং স্রষ্টার মধ্যে চালাচালি করতে থাকেন, মাঝখানে বল হয়ে গড়াতে থাকে নারীর জীবন।
মোটা মোটা বই মুখস্ত করেনি যে রিকশা চালক, তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানের বোঝায় ঠাসা নয় যে দিন মজুরের মগজ, রাতের বেলা মদ খেয়ে ঘরে ফিরে বউ পেটায় যে ট্রাক ড্রাইভার তাদেরকেও বোধ হয় সময় এবং যত্ন নিয়ে চেষ্টা করলে আমাদের বক্তব্য কিছুটা বুঝিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু আমাদের লেখালেখি যাদের উদ্দেশ্যে সেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিতদের বেশিরভাগই কোনোদিনই বুঝবে বলে মনে হয় না। এরা ইচ্ছা করেই চোখ কান বন্ধ করে আছে, বউকে মোজাইক করা ফ্লোরের ফ্লাট আর হীরার আংটি কিনে দিয়ে নারীজাতির প্রতি দায়িত্ব পালন হয়ে গেল বলে মনে করে এরা। এইসব অন্ধ বধির ও মূকেরা কি কখনো ফিরবে?
জেসমিন চৌধুরীর ফেসবুক থেকে