চিনি-পিঁপড়া তত্ত্ব ও আপনার কুদৃষ্টি
প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:৫৩
চিনি বা মিষ্টি খোলামেলা ফেলে রাখলে পিঁপড়া যে ছেঁকে ধরবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এই উপমা দিয়ে পোশাক সম্পর্কিত আলোচনার সমস্যাটা এই যে, মানুষ কিন্তু চিনি বা পিঁপড়া কোনটাই না, তাহলে খামোখা বারবার এই 'যুক্তি' আমরা কেন দেখাই?
সেদিন একটা সুন্দর লেখা আমি পড়েছি, একজন আমেরিকানের, যেখানে লেখা একটা মেয়েকে যতটা যত্নে আমরা বড় করি, একটা ছেলের প্রতি সে যত্নটা কখনো দেখানো হয় না। উনি কিন্তু বলছেন না মেয়েদের সুযোগ সুবিধা বেশি আর ছেলেদের (সামাজিক) অধিকার কম, বরং, ঠিক তার উল্টোটা যা আমাদের উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটের সাথেও মেলে। কমবেশি আমরা সবাই একটা মেয়েকে "একই অঙ্গে এত রূপ"-এ বড় করে তুলি। একজন পুরুষ কিছু ভুল করতেই পারে, কিন্তু একজন মেয়ে করলে তো হাজার ঝক্কি তাকেই পোহাতে হবে এই সমাজে, তাই তাকে একটি উচ্চতর মাপকাঠিতে আমরা মেপে বড় করে তুলি, আপাতদৃষ্টিতে তাকেই ভালো রাখার প্রত্যাশায়।
সেই আমেরিকান লেখক বলছেন, ছেলেদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা আমরা এত কম করে রাখি কেন? কেন তাকেও উচ্চতর স্ট্যান্ডার্ডে বাঁধি না? না, কেবলমাত্র বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দেখাতেই নয়, ছেলেটা তার নিজস্ব সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠত্বে বিকশিত হওয়ার সুযোগও পেতো তাহলে! এখন তার আর্থসামাজিক বিকাশটা ঘটে ঠিকই, কিন্তু আত্মিকটা ততখানি নয়!
এই চিনি-পিঁপড়া ফালতু উদাহরণটি দিতে শুনেছি আমি ছেলেমেয়ে উভয়লিঙ্গকেই; এবং এর প্রতিবাদে (ন্যায়সঙ্গতভাবেই) প্রত্যেকবার কেবল নারী-অধিকারই উঠে আসে। কিন্তু ভাইসাহেব, এটুকু বুঝলেন না, নিজেকে যে এই উপমায় আপনি একটা পোকা বানিয়ে ফেললেন যার নিজস্ব চিন্তাশক্তি নেই, ভালো থেকে মন্দে ভেদাভেদ করবার মস্তিষ্কবল নেই; কেন নিজেকে এইভাবে ছোট করবেন? এই কীটপতঙ্গের জীবন কোন জীবন হলো!
এ তো গেল তত্ত্বকথা! কোনটা অপরাধ আর কোনটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, অন্তত এ দুটোতে তো পার্থক্য করতে শিখুন! চিনি ও পিঁপড়াকে ছুটি দিলাম, একটি নতুন উপমা বলি: আমি আমার দামী হ্যান্ডব্যাগটা যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলাম, আমি সেটাকে আমার স্বাধীনতা বলতে পারি আর আপনি স্বেচ্ছাচারিতা; আপনি বড়জোর আমার এই 'ঔদ্ধত্যে' বা 'ভুলে' আমার উপর বিরক্তবোধ করতে পারেন, কিন্তু যে মুহুর্তে সেই হ্যান্ডব্যাগটির দিকে হাত বাড়াবেন, আইনী/সামাজিক/কমন সেন্স বা মানবিক, সব দিক থেকে আপনি হয়ে যাবেন স্রেফ অপরাধী! - নিজেকে পোকা ডেকে কতকাল আর বোকা সাজবেন, বলুন?
কারো পোশাক তার নিজস্ব সেল্ফ-এক্সপ্রেশন, সেটির দিকে কুদৃষ্টি দেবেন না; আর বক্রহস্ত দেবেন তো সেই হাত গুঁড়িয়ে দেয়াটাও কিন্তু সে নারীর অধিকার ভাইজান, অপরাধ মোটেও না!
রনিয়া রহিম এর ফেসবুক থেকে