আপনাদের অভিবাদন!
প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৫৭
গত বেশ কিছুদিন যাবৎ 'মি টু' নামক হ্যাশ ট্যাগে নারীদের একটা দারুন আন্দোলন অনলাইনে চলছে।
সারা বিশ্বজুড়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মেয়ে যারা তাদের আশেপাশেই ভদ্রবেশে লুকিয়ে থাকা পুরুষরুপী ইতরদের দ্বারা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন, তারা অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে এই ট্যাগ ব্যবহার করে খুলে দিচ্ছে সেইসব ইতরদের মুখোশগুলো।
এই প্রতিবাদের সবচেয়ে আশাপ্রদ দিক হচ্ছে, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বাঙালি নারীও স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে যোগ দিয়েছেন এই প্রতিবাদে, নিজেদের নাম পরিচয় দিতেও তারা দ্বিধা করছেন না। তারা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছেন যাতে করে এতদিন পরে হলেও (পশ্চিমা বিশ্বের মতো) মুখোশ খুলে যাক- শাস্তি হোক সেই ভদ্র মানুষরূপী অসভ্য ইতরগুলোর, তারা যথাসম্ভব নিষ্কণ্টক-নিরাপদ করতে চাচ্ছেন আমাদের আগামী প্রজন্মের মেয়েগুলোর চলার পথ!
যে কোন সাধুবাদই কম পড়ে যায় এই সাহসী নারীদের জন্য, তারপরও অভিবাদন আপনাদের।
ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই ব্যাপারটা নিয়ে এই বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখিনি!
এর ঠিক অল্প কয়েকদিন আগেই সাফ অনুর্ধ টুর্নামেন্ট এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমাদের অনুর্ধ ১৫ প্রমিলা ফুটবল দল। প্রথম দুই একদিন আমাদের ভার্চুয়াল এবং বাস্তব জীবনে সে কি উচ্ছ্বাস ছিল তাদের সেই গৌরব গাঁথা নিয়ে!
আমাদের দলের অধিনায়ক থেকে শুরু করে অন্যান্য খেলোয়াড়েরা কিভাবে- কত কষ্ট করে এই সাফল্য পেয়েছেন, তার অতি সূক্ষ্মতর বর্ণনাও দিয়েছে মিডিয়াগুলো।
কিন্তু এখনই তাদের আর কোন খোঁজ খবর কোথাও নেই, শোনা যায় না কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা অথচ খোঁজ নিলে জানা যাবে সেই পরিশ্রমী-আত্মত্যাগী অনেকের ঘামই হয়তো এখনো শুকায়নি!!
এদের নিয়েও লেখার ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু লিখি নি!
সম্প্রতি তসলিমা নাসরিন এক সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেছেন কিভাবে তাকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নিগৃহীত হতে হয়েছে বাংলাদেশী আমলাদের দ্বারা!
সাধারন কাগজ সত্যায়িত থেকে শুরু পাসপোর্ট নবায়ন পর্যন্ত তাকে নিষ্প্রয়োজন ঝামেলায় তাকে যেতে হয়েছে।
কেন লেখা হয় না এই লেখাগুলো? এমন প্রশ্ন করলে জবাব মেলে অনেক কিন্তু সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যেই উত্তর পাওয়া যায়, সেটাও প্রশ্নবোধক!
- কি লাভ, লিখে?
এই তো উত্তর মিলে! আসলেই তো কি লাভ লিখে! এমনটা তো নয় যে, এই ইতরগুলোর পরিচয় জানার পর পরই এরা আইনের আওতায় আসবে- বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে এদের বিরুদ্ধে! এমন তো নয় যে, যারা আমাদের ফুটবল ফেডারেশনে আছেন তারা ফুটবলের গতিপথ আমাদের চেয়ে কম বোঝেন! এমন তো নয় যে, যারা সরকারী উচ্চ পদে আছেন - তারা সন্ত্রাসী-স্বাধীনতা বিরোধী আর সাধারণ মত প্রকাশকারী লেখক-লেখিকা চিনেন না!!
অথচ এই সমাজে সুপরিচিত ধর্ষকের পক্ষেও জনপ্রতিনিধি আইনি লড়াইয়ে দাঁড়ান, নারী ক্ষমতায় থাকতেও মৌলবাদীরা ব্যস্ত সময় কাটায় নারীদের মাঠ ছেড়ে চার দেয়ালে আটকাতে! মনে প্রানে পাকিস্তানী নাগরিক বসে এই দেশের পতাকা লাগানো গাড়িতে- এমনকি এখনো স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীরা ঘুরে বেড়ায় টিভির টকশো-তে, চরে বেড়ায় ফেসবুকের অবাধ মাঠে অথচ রাষ্ট্রযন্ত্রের এই ভুলগুলো যারা যুগে যুগে ধরিয়ে দিতে চেয়েছে হয় তারা হয়েছে দেশান্তরী না হয় দেহান্তরী!
অদ্ভুত রকমের দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রই চায় না কোনভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হোক।
তাইতো, সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, ক্ষমতায় থাকা-না থাকা উচ্চ পর্যায়ের মানুষগুলো নির্লজ্জের মতো অনৈতিকতার পক্ষে কথা বলেন, বিভিন্ন খেলায় বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েও আমাদের মেয়েরা হেঁসেলে ঢুকতে বাধ্য হয়, যখন তারই এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্ব মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজ দেশের পতাকার উড়ায়!
আসলেই কি লাভ, এগুলো লিখে!! কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসায়- দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসায় লাভ ক্ষতির হিসাব কে কবে করেছে!
এত শত বাধা বিপত্তির মাঝেও মনে ক্ষীন আশা, এই যে আমাদের নারীদের এভাবে প্রতিরোধ হিসাবে জেগে উঠা- এটা কোন সাময়িক দমকা হাওয়া নয়। এরাই এক সময় সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে বিচারের কাঠগড়ায় তুলবে সেই ইতরগুলোকে!
আমাদের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হতে হতে একসময় কারো সাহায্য ছাড়াই নিজেরাই বিশ্ব মঞ্চে আমাদের পতাকা উড়াবে, বাধ্য করবে দেশের অযোগ্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরী করাতে!
মহীয়সী- সাহসী নারী, অভিবাদন আপনাদের সকলকে যারা- অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন, যারা সকল কষ্ট যন্ত্রনা সহ্য করে মাথার উপরে তুলে ধরেছেন দেশের পতাকাকে, এই দেশকে।
লেখক: চাকুরীজীবী