যৌন অপরাধ: বাংলাদেশ বনাম বিশ্ব
প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০২:৩০ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০২:৩৩
এক ভাইয়ের লেখায় পড়লাম, পশ্চিমা বিশ্বে যৌন অপরাধ আমাদের দেশের চেয়ে বেশি হয়। এই ধরনের অপযুক্তি প্রায়ই শুনি, এটা নিয়ে লিখার কিছু নাই। কিন্তু লিখছি, কারণ ভাই আমার একজন প্রিয় বিতার্কিক।
বন্যা আহমেদের একটা প্রবন্ধে পড়েছিলাম, সুইডেনে যদি কোন বিবাহিত মহিলা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে, আমি পাঁচ বছর ধরে বিবাহিত। এবং আমার স্বামী গত এক বছর ধরে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমার সাথে যৌন সম্পর্ক করছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ সেই স্বামীর বিরুদ্ধে '৩৬৫' টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। কেন? এক বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিন সে স্ত্রীর 'কনসেন্ট' এর ধার ধারে নি, তাহলে ৩৬৫ টি ধর্ষণ মামলাই তো খেতে হবে। এখন বাঁকি খুঁটিনাটি না হয়, কোর্টে দেখা যাবে।
আর আমাদের দেশে 'ম্যারিটাল রেপ' বলে আদৌ কোন বস্তু নেই। সিরিয়াসলি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রেপের সংজ্ঞা এভাবে শুরু হয়েছে, "কোন পুরুষ বৈবাহিক সম্পর্ক নেই এমন নারীকে যদি....."।
আর যদি বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে, কিন্তু স্ত্রীর 'ইচ্ছে' না থাকে? এখানে কি জোর করা জায়েজ? এক্ষেত্রে কবি নীরব নয়, কবি বলছে, 'জায়েজ'।
যেদেশে বিবাহিত নারীর 'ইচ্ছে' বা 'কনসেন্ট' এর কনসেপ্টই নেই, সেই দেশের আদৌ কি নিজেকে পশ্চিমের থেকে উন্নত তো দূরে থাক, তুলনাটুকুও করা সাজে?
এটা অনেকটা আরব দেশের মতো। তাদের দেশে ধর্ষণ নাকি শূন্যের কোঠায়। আরে ভাই, শুন্যের লেভেলে তো থাকবেই, কারণ সেই দেশে ধর্ষণ মামলাই হয় না। মামলা হয় না কারণ, সেই বিখ্যাত 'চার সাক্ষী' আইন। ধর্ষণ প্রমাণের জন্য যখন চারজন 'মুসলিম', 'পুরুষ' ও 'ঈমানদার' ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন হয় এবং যেহেতু ধর্ষক চার-চারজন সাক্ষী রেখে ধর্ষণ করতে রাজি হয় না বিধায়, মামলা করে ধর্ষিতাই উলটো ব্যভিচারী (!!!) প্রমাণিত হয়ে লিগ্যালি ১০০ দোররা খায়-- সেই দেশে কোন মেয়েকে পাগল কুকুরে কামড়েছে যে, 'ধর্ষণ মামলা' করবে?
এখন সেই সুযোগে যদি আপনি বলেন ওদেশে ধর্ষণ নেই, তাহলে তো আপনাকে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ সব রংয়ের সেলাম দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ থেকে যেসব হতভাগীরা গৃহকর্মীর কাজ করতে সৌদিতে যায়, তারপর তারা যখন কোনমতে প্রাণটা নিয়ে ফেরত আসে, তাদের যে মর্মান্তিক ছবি আর জবানবন্দী পত্রিকায় ছাপা হয়, তা দেখে বুঝে নেবেন, ওদেশের প্রকৃত চিত্রটা আসলে কি।
কোন দেশে সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সের পরিমান কত, তা নির্ধারণ করা হয় সেদেশে এ বিষয়ে কতগুলো মামলা হয়েছে তা দেখে। বাংলাদেশে আপাতভাবে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে বলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, আসলে সেটা সাইলেন্স ব্রেকিং এর ফলাফল। আগে ঘটনাগুলো নির্যাতিতরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ করত না, এখনো অনেক সময়ই চেপে যাওয়া হয়, কিন্তু মুখ খোলার মাত্রাটা বেড়েছে। এবং এই "সাইলেন্স ব্রেকিং" বিপ্লবটা পশ্চিমে আগেই হয়ে গেছে বলে সেখানে যৌন নির্যাতন সংখ্যায় ও মাত্রায় বেশি মনে হয়।
ঘটনার ভেতরেও ঘটনা থাকে রে মনু...
তাসনিম হালিম মিম এর ফেসবুক থেকে