চলতি পথে বাংলাদেশ
প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৫০ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:৩৩
দুপুর দুইটায় কাজের শিফট শুরু হবে। আমি পয়সা বাঁচাতে ট্রেনে কম চড়ি। ট্রেনে আধঘন্টার পথ বাসে দেড়ঘন্টায় যাই। সব মিলিয়ে দুইঘন্টা হাতে নিয়ে বের হই। ১২.১৫ তে বাস ধরি, বিশ মিনিট পরে বাস পাল্টাই, আরেক বাসের জন্য অপেক্ষা করি। এই বাসটাতে একটু ভিড় থাকে, সবসময় বসার জায়গা পাওয়া যায় না। ডিসেম্বর মাস। চারদিকে ক্রিসমাসের আয়োজনে ব্যস্ত লোকজন। প্রায় প্রত্যেকের হাতে উপহারের ব্যাগ, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সবাই। পাশের তিনটি ফ্লাট থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড দিয়ে গেছে দরজার লেটার বক্সের ফাঁকা দিয়ে, তাদেরকে চিনিও না। কার্ডগুলি তুলে টেলিভিশনের সামনে সাজিয়ে রেখেছি, তা দেখে আমার ফ্লাটমেট খুব হাসলো। এসব নাকি সবাই করে, কিন্তু কী এক ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়েছি আমি, অচেনা, বিদেশি, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একজন মানুষকে যে কেউ এভাবে শুভেচ্ছা জানাতে পারে তা আমার ধারনাই ছিল না!
সেদিন খুব ঠান্ডা পড়েছে, বাইরে মাইনাস টেম্পারেচার, সাথে খুব বাতাস। যথারীতি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাস থামার পর উঠতে গিয়ে দেখলাম ড্রাইভার শান্তা ক্লজের হ্যাট পরে আছে, আর গাইছে ক্রিসমাসের গান। এতক্ষণ ঠান্ডার কষ্ট উধাও হয়ে গেল, আনন্দও এভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এটা ভেবে ভালো লাগলো। বসার জায়গা পেলাম। গুছিয়ে বসে ভাবছিলাম এই সময়ের দেশের কথা। বিজয়ের উৎসব পালন করে আমার দেশের মানুষেরা এখন। হঠাৎ দেখি বাসের নামার দরজার হাতল ধরে বৃদ্ধ এক লোক দাঁড়িয়ে আছে, কাঁধে একটি কাপড়ের ব্যাগ ঝুলানো। ব্যাগের উপরে পেইন্ট করে ‘অ, আ, ক, খ’ লেখা, এক কোনায় লাল সবুজ পতাকা আঁকা। উঠে লোকটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু আড়ষ্ঠ ভঙ্গিতে বললাম, তোমার ব্যাগটা অনেক সুন্দর। লোকটি খুশি হয়ে বললো, তোমার ভালো লেগেছে? আমি মাথা নাড়তেই সে বললো, ব্যাগটি তার এক বাঙালি বন্ধু দিয়েছে। সে বন্ধুর কাছ থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস শুনেছে, বাকিটা বই ঘেঁটে জেনেছে। ছোট্ট একটি দেশ, যে দেশের মানুষেরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, অক্ষরগুলি দেখিয়ে বললো এই হলো সে দেশের মানুষের কথা বলার মাধ্যম। আর পতাকাটি দেখিয়ে বললো, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের লাভলী ফ্ল্যাগ, ইজেন্ট ইট নাইস? আমি উত্তর দিলাম খুব সুন্দর। সে বলে জানো, এই দেশের ত্রিশলক্ষ মানুষ স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে! ক্যান ইউ ইমাজিন? আমি মাথা নাড়ি, খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। তারে আমি হাত বাড়িয়ে বলি, আমি একজন বাংলাদেশি!