নির্ভয়াকান্ডের ৫ বছর: মেয়েরা ‘মাল’ই রইলো
প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৮
সকাল ৭.২৩ এর ‘মাগি লোকাল’ এ দৌড়ে ‘মালটা’ উঠল। দশ মিনিট লেট হবে আজ। বস হাসতে হাসতে বলবে ‘কি করো সারা রাত? আমাদের ও একটু গল্প বলো ওসবের।’ ‘মাল’ আড়ষ্ট হয়ে বসে। বস এর অমায়িক চোখ ‘মাল’ এর বুকের দিকে। সরল হাসি চোখে।
আর একজন ‘মাল’ কলেজ এ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। কাল অনেক রাত অব্দি ন্যাকাপনা করে কান্নাকাটি করেছে। যে ছেলেটাকে ‘ফাঁসিয়েছিল’ ও, সে মায়ের কথা শুনে বলেছে পড়াশোনার অসুবিধে করে প্রেম করবেনা। আই-পিল খেলেই ‘মাল’ এর ‘মাল’ খসে যাবে। ফালতু কান্নাকাটি যেন না চলে। ফোনটা খটাশ করে রেখে দিয়েছিল।
স্কুলের কচি ‘হবু মাল’ সদ্য নাইন এ উঠেছে। বাবার ভালো বন্ধু দত্ত কাকু ছোট থেকে ওকে আদর করে। কোলে বসিয়ে টফি খাওয়ায়, পিছনে শক্ত কি যেন ঠ্যকে, সিগারেট এর সুন্দর গন্ধওয়ালা মুখ নিয়ে হামি খেতে আসে। এখন ‘মাল’ এর নাইন এ উঠে কথা ফুটেছে। বলে কিনা কি দত্ত কাকু ভালো না। ওর নাকি অসুবিধা হয় কাকু গা এ হাত দিলে। কি দজ্জাল মেয়ে। এ বড় হয়ে কি সাংঘাতিক ‘মাগি’ হবে ভাবলেই ভয় হয়।
এরকমই আর এক নাক টিপলে দুধ বেরোয় ‘মাল’ রোজ শান্তভাবেই মেনে নিত পিটি স্যারের আঙুল দিয়ে খেলা। কিসব বাপি মামমাম এরর বয়সী ন্যাংটো লোক ও মহিলার ছবি দেখাতো স্যার। আর হাত দিত ওখানে। খুঁচিয়ে, খুঁচিয়ে। চুপ করেই থাকতো, কিন্তু প্যান্টিটে রক্ত লেগে গেছিল। বড় ‘মাগি’, মানে ওর মা দেখে ফেলে।
আর এক বিগত যৌবনা ‘মাল’ এক হাতে বাচ্চা আর আর এক হাতে ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে। লোক দেখানো কান্না কাঁদছে। পাড়ার লোক কে দেখাতে চাইছে ‘বেশ্যাটা’। কি এমন হয়েছে যে বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে? ওকে বলা হয়েছিল বাবাকে বলতে পণ এর বাকি টাকা টা এখুনি লাগবে। হাত টান আছে। না বলাতে শাশুড়ি ভয় দেখানোর জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছিল। তাতেই কি কান্না। মুখ চেপে থাপ্পড় মেরে শেষে থামাতে হয়। বদ চরিত্র মাল।
এরকম ‘মাল’, ‘মাগি’, ‘বেশ্যা’ গুলোকে রোজ পুরুষদের সহ্য করতে হয়। মাথায় যাতে না চড়ে বসে ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দিতে হয়, গা এ কেরোসিন ঢেলে দিতে হয়, মুখ ধুইয়ে দিয়ে হয় অ্যাসিডে আর যখন ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে থাকে এরা, একটু পিছিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসে নারী দিবসে অন্য নামে ডাকতে হয়। অভিবাদন করতে হয়। মোমবাতি জ্বালাতে হয় পার্ক স্ট্রিট, ইন্ডিয়া গেট, মহিলা কমিশন এ।
যে মালটা ট্রেনে উঠেছিল, যে হবু মালটা স্কুলে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল, যে বিগত যৌবনা মাল বাচ্চার হাত ধরে এক কাপড় এ বেড়িয়ে এসেছিল, তারা যদি নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে রোজ এক সাথে জড়ো হয় আপনার কনুই, পা, পুরুষাঙ্গ, মানসিকতা, মতলবে মোমবাতি জ্বালাবে বলে?
ঠান্ডা চোখে, বুকের দুটো বোতাল খুলে, নিজের ইচ্ছে মতো কাপড় পরে দাবি জানায় এই নারী দিবস ঝুটা হ্যায়? এই একদিন স্পা এ ডিসকাউন্ট দিয়ে, বাকি ৩৬৪ দিন ভিড় বাস এ পিছনে হাত বোলানো বন্ধ হোক।
যদি চ্যানেল এর বুম গুলোর সামনে রেপ ভিকটিম চেঁচিয়ে ওঠে নিজের নাম ধরে? যদি রক্তমাখা অন্তর্বাস মুখে ছুঁড়ে মারে সেই পুলিশের যে হাজার প্রশ্ন করে জানতে চায়, সে আদৌ ধর্ষিত হয়েছিল কিনা? লিঙ্গ যোনিতে ঢুকেছিল কিনা? কতক্ষন কষ্ট পেয়েছিল সে আর কতটা মস্তি নিয়েছিল?
রাস্তাঘাট, শোয়ার খাট এর নিরিহ মাল গুলো এক রাতে যদি দারুন রাগে ফেটে পরে? যদি মেয়েতে বদলে যায় সোনাগাছির মাল? যদি আর একটাও নির্ভয়া হবো না কিন্তু মাঝরাতে একা বাড়ি ফিরবো, এই শপথ নেয় বিপিও তে কাজ করা তরুণী? যদি দুষ্টু পুরুষাঙ্গগুলো কুচুৎ করে কেটে দেয় সেলাই এর কাঁচি দিয়ে সেই মেয়ে যার গালে আজ ও অ্যাসিড পোঁড়া দাগ?
বিপ্লব হোক ঘরে আগে। পাড়াতে এরপর, সমাজে তারপর। এক পা এক পা। আসুন আশেপাশের মাগিদের মেয়ে বলে ডাকি। ৩৬৫ দিন নরম কাপড় এ পা মুছিয়ে, চা এর কাপ এগিয়ে পুরুষ হতে শিখি। বিনা সঙ্কোচে মাথায় চুমু খেয়ে বলি রাতে কি খাবে বলো? সেটাই রান্না করবো।