প্রিয় পূর্ণিমা রাণী শীল
প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:১৪ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:১৭
প্রিয় পূর্ণিমা রাণী শীল,
কেমন আছ? এই বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল তাই এই চিঠি লিখছি।
উঁহু, আমি তোমাকে কোন সহানুভূতি জানানোর চেষ্টা করবো না, সে একেবারেই মুল্যহীন। আমার দেশের ইতর প্রাণীদের হয়ে ক্ষমাও চাইবো না, কারণ আমার ক্ষমাপ্রার্থনা ইতরদের ইতরামিও বন্ধ করতে পারবে না, তোমার দুঃসহ স্মৃতি বা বর্তমান যন্ত্রণা কোনটাই প্রশমিত করতে পারবে না।
তাহলে তোমাকে আমি কি বলতে চাই? আমি বলতে চাই যে, আমি তোমাকে দেখে গর্বিতবোধ করছি। তুমি কোথায়, কেমন আছ, কি করছ তা জানি না। তবু তোমার ছবি দেখে মনে হয়েছে, সেই ভয়ংকর মৃত্যুসম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার তোমাকে শেষ করে দিতে পারেনি। তুমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছ। তুমি আরো সুন্দর হয়েছ দেখতে। পূর্ণিমার আলোর মত পবিত্র তুমি।
দেখ, এই দেশে গণধর্ষণ বা সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ধর্ষণের কোন ধর্ম, বয়স, বা সামাজিক শ্রেণী নেই। নারীদেহের মনে হয় তা থাকেও না। পূর্ণিমা হোক কিংবা শাজনীন বা হিজাবী তনু, কায়দামত পেলেই হল।
সংখ্যালঘু নির্যাতনও তেমনি। মালাউন বলে হুমকি ধামকি দিলাম। ভয়ে ভিটামাটি রেখে ইন্ডিয়া চলে গেল, দিব্যি এনিমি প্রপার্টি বলে লিজ নিয়ে নিলাম।
তোমার গর্বের জায়গাটা কোথায় জানো? ধর্ষিতা বলে নিজেকে নিজে মেরে ফেলনি বলে। দশ বারটা শেয়াল কুকুরে তোমাকে অপবিত্র করতে পারে নি, সেটা বুঝতে পেরেছ বলে। তুমি তো কাজ করছ, স্বাবলম্বী নারী। আমি তাদের নিয়েও গর্বিত যারা তোমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তোমাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। অথচ, এদেশে ধর্ষিতারা আত্মহত্যা করে, আত্মগোপন করে, নিজেকে অপবিত্র ভাবে- কেন, তাদের দায়টা কোথায় ছিল? কেন তারা মাথা তুলে এই সমাজকে বলে না, দোষ আমি করি নি যে আমাকেই পালাতে হবে। তোমরা বসে ধর্ষক পালবে, সে দায় কি আমি নেব?
তোমার আর তোমার পরিবারের পথ কতটা বন্ধুর ছিল, তা আমার কল্পনার বাইরে। অনেকে তোমাকে সহানুভূতি দেখাতে ব্যস্ত, আমি হলে প্রতিটা নির্যাতিতা আর তার পরিবারকে বলতাম দেখ, পূর্ণিমা আর তার পরিবারকে দেখ। ধ্বংসস্তুপ থেকে কিভাবে উঠে দাঁড়ায়। তোমরা ভেঙে পড়ো না। পূর্ণিমাদের মত হও। নিশ্চয়ই পারবে। কিছু ইতরের কয়েক ইঞ্চি শিশ্নদণ্ড তোমার জীবনে কেন বাধা হয়ে দাঁড়াবে?
একথা সত্যি মলমূত্র হাতে কিছু ইতর এখনো তোমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এদের তোমার পথে বাধা হতে দিও না। দৃঢ় ভাবে বল, আমি পূর্ণিমা, আমি অপ্রতিরোধ্য, তোরা আমার কিচ্ছু করতে পারবি না।
তোমাকে আমি নিজের বোন হিসেবে গণ্য করি। ভালবাসি। এতটুকু অসম্মান আমার মনে নেই। এরকম অনেকেই করে। আমি জানি না, তাদের সংখ্যা কত, হাজার না লক্ষ না কোটি ।
আমি তেমন কোন অনলাইন এক্টিভিস্ট না, নয়তো একটা জরিপ করে দেখাতাম ঠিক কতজন মানুষ অন্তর থেকে তোমায় সম্মান করে, বোনের মত ভালবাসে। জানি, এর তেমন মূল্য হয়ত নেই, তবু জেনো এই শ্রদ্ধাটুকুর কথা। দেশ শুদ্ধ লোক নিশ্চয় ইতর নয়।
পূর্ণিমা তুমি হারিয়ে যেও না। এই ইতরগুলিকে চিনিয়ে দিও, কারা এত বছর পরও প্রেতাত্মার মত তোমাকে তাড়া করছে। আমরা তোমার অপেক্ষায় থাকবো।
ইতি
তোমার বোন।