কিভাবে বন্ধ হবে শিশু ধর্ষণ!
প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৪৬
সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কুড়ালিয়া গ্রামে একই ব্যক্তি কর্তৃক কয়েকটি শিশুকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। উক্ত গ্রামের সোবাহান তালুকদারের ছেলে মুহসীন তালুকদার (২৭) তার পাশের বাড়ির চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রিয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেসময় মেয়েটি কোনরকমে ছুটে পালিয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় তার মাকে ঘটনাটি জানায়। তিনি গ্রামের মুরব্বীদের কাছে ঘটনার বিচার দাবি করেন। তারই প্রেক্ষিতে একটি গ্রাম্য সালিশ হয় আর সেখানে মুহসীনের বিরুদ্ধে আরও কিছু শিশুকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে আসে। তথাকথিত সমাজ এবং লোকলজ্জার ভয়ে যে ব্যাপারে আগে অভিভাবকরা মুখ খোলেনি। উল্লেখ্য মুহসীন কুড়ালিয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি এবং নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত।
উক্ত সালিশী বিচারে মুহসীনকে সামান্য মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং দুইদিন পরই সে বহাল তবিয়তে চাকরিতে যোগদান করে। ঘটনাটিতে গ্রামের মুরুব্বীদের হস্তক্ষেপ থাকায় ঘটনার শিকার কেউই থানায় গিয়ে অভিযোগ করার সাহস করেনি।
প্রসঙ্গত ঘটনাটি অবগত হবার পর আমি বেসরকারিভাবে মেয়েটি এবং তার মায়ের সাথে কথা বলি এবং তাদের স্বীকারোক্তি ফোনে ধারণ করি। মেয়েটির সাথে যৌন অত্যচারের বর্ণনা সে যেভাবে দিয়েছিল তা গা শিউরে ওঠার মত! মেয়েটির মা তার নিজের মেয়ের ঘটনার সাথে সাথে অন্য বাচ্চাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের যখন জিজ্ঞাসা করি তারা এই নিকৃষ্ট অপরাধীর বিচার চান কিনা, তারা বলেন যে কঠিন শাস্তি চান তারা মুহসীনের। কিন্তু থানায় যাওয়ার প্রসঙ্গে পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বারবার একটাই কথার পুনরাবৃত্তি আসছিল যে তারা সমাজে বাস করেন, সমাজে চলতে হয়।
কি অদ্ভুত আমাদের সমাজ! যা কতগুলো শিশুর নিরাপত্তা দেওয়া তো দূর, তাদের যৌন নির্যাতনকারীদের পরোক্ষভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সব অপরাধী। মনের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে নতুন কোন মেয়ে বা শিশুকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছে। শুধু এই এক মুহসীন নয় এরকম আরও কতশত মুহসীন হয়তো ভাবছে আমরাও পারি, সমাজ আমাদের বাঁচিয়ে দেবে!
এটাই যদি হয় আমাদের সমাজের রূপ তাহলে কেন বন্ধ হবে শিশু ধর্ষণ, যৌন হয়রানী, ইভ টিজিং এর মত জেঁকে বসা অপরাধগুলো? ব্যক্তি সচেতনতা তৈরী হয় সমাজের প্রতি নির্ভরশীলতা থেকে। কিন্তু এই নির্ভরশীলতা যেন কোন ব্যক্তি বা পরিবারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে। সেই ব্যাপারে সচেতনতা আবশ্যক সবার আগে গোড়া থেকে এবং সেই সাথে আইনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
জাগরণীয়ার ইমেইল থেকে