#metoo (আমার কিংবা অপরিচিত কারো গল্প)
প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১১:২৫
হতে পারে আমার গল্প কিংবা আমারই কোন বোন, বান্ধবী কিংবা একদমই অপরিচিত কারো গল্প। হতে পারে এই বাংলাদেশের কিংবা কোন ভিনদেশের কারো গল্প, তবে হ্যাঁ একজন নারী, কিশোরী কিংবা যুবতী বা হতে পারে এক ছোট্ট বালিকার গল্প।
# কৈশোরে সবে পা দিয়েছে সে কিশোরী, সে জানে তার শরীরে কিছু কিছু পরিবর্তন হচ্ছে, তা নিয়ে হয়তো কিছুটা মন খারাপ তার, সে হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারন বুঝতে পারে না, জড়সড় হয়ে থাকে। এরই মাঝে একদিন তারই কোন এক নিকট আত্মীয় তার সদ্য বড় হতে থাকা স্তনে হাত দেয়, চাপ দেয়। অবাক কিশোরী লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।
# ছোট্ট বালিকা স্কুলেও যায়না, সবার কোলে কোলে ঘুরে বেড়ায়। একদিন এমনি একজন তাকে কোলে নিয়ে আদর করার ছলে তার যৌনাঙ্গে হাত দেয়, বুঝার বা বলার বয়স ছিল না, তাই কেঁদে কেটে কোল থেকে নেমে যায়।
# অনার্স পড়ুয়া তরুণী, অংকে ভীষণ কাঁচা, স্যারের বাড়ি যায় প্রাইভেট পড়তে। এই বয়সেও প্রাইভেট পড়তে হয়! কত জন বাঁকা কথা বলে, সে তো জানে পাস মার্ক তাকে তুলতে হবে। বাড়িতে ডেকে নিয়ে স্যার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। কাউকে বললে স্যার উল্টা সবাইকে বলবে সে নিজেই স্যারের বাড়ি এসেছে, স্যারকে বদনাম করতে। তরুণী নির্বাক বসে থাকে।
# মাস্টার্সে পড়ে তরুণী, এই কোর্স সেই কোর্স নিয়ে আলাপ করতে কোর্স করডিনেটরের কাছে প্রায়ই যেতে হয়। উনি খুব হেল্পফুল, সে যে সময় বলবে তখনই তো যেতে হবে, এত ব্যস্ত লোককে তো যখন তখন বিরক্ত করা যায় না। একদিন সুযোগ বুঝে স্যার মেয়েটির হাত মুচড়ে দেয়, গাল টিপে বলে তুমি আমার সাথে প্রেম করোনা ক্যান! বাপের বয়সী লোকের এই আচরণে ক্ষুব্ধ তরুণী যখন বিচার চাইতে চায়, তখন দ্বিতীয় দফা অপমান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে, তাকেসহ তার সকল কোর্সমেট যারা বিচার চেয়েছিল, তাদের শো কজ লেটার দেয়া হয়।
# পঞ্চাশ পেরিয়েছে একজন নারীর, শরীরের এই সমস্যা সেই সমস্যা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে দৌড়ান। একদিন বুঝতে পারেন এক বিশাল বড় প্রফেসর তাকে পরীক্ষার নামে এমন জায়গায় হাত দিচ্ছেন, যেটা অপ্রয়োজনীয় এবং পেইনফুল। অতঃপর ফিস দিয়ে বেরিয়ে আসা।
আপনারা যারা মি টু স্ট্যাটাস নিয়ে ট্রল করছেন, তারা একবার সত্যি করে বলেন তো আপনার আশে পাশে কি এমন কোন মেয়েই নেই যে বা যারা জীবনে কোনদিনই এমন অবস্থার সম্মুখীন হননি! যে সকল নারী বলছেন এই স্ট্যাটাস নারীর জন্য আত্মগ্লানিকর, তারা বলেন তো শুধু নারী হবার কারনে জীবনের প্রতি মুহূর্তে যে আপনাকে একটু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, এক অজানা আশঙ্কা নিয়ে পথ চলতে হয়- সেটি আপনার জন্য কতটা সম্মানজনক, কতটা সুখকর! যে সকল পুরুষ এই মি টু স্ট্যাটাস নিয়ে হাসি তামাশা করছেন, তারা বলেন তো আপনারা কয়টি যৌন নির্যাতনের ঘটনার পর প্রতিবাদে সামিল হয়ে বলেছেন- মি টু।
আমি জানি - আমি বা আমার মতো আরও অনেকের অনলাইনে এই সকল লেখায় সমাজ, দেশ বা পৃথিবীর কিছুই যায় আসে না, এমনকি এত লেখার পরও যৌন নির্যাতন, নারী নির্যাতন থামবে না- তবুও আমরা কি সে সকল নির্যাতিত নারীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারিনা!
আমাদের এই চেষ্টা, এই লেখা, এই চিৎকারে যদি সমাজের একজন মানুষও সচেতন হন, তবে সেই চেষ্টা করা কি সত্যি খুব হাস্যকর?
#মিটু #metoo #me_too
লেখক: চিকিৎসক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট