নারীবাদীরা পুরুষ বিদ্বেষী নয়
প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ০২:৪০
কেউ নারীবাদী কোন লেখা লিখলেই কিছু পুরুষ তাদের গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকেন৷ তাদের পুরুষ বিদ্বেষী বলে গালি দিতে থাকেন৷ এর সাথে আছে বিশ্ব বিখ্যাত গালি বেশ্যা৷ আবার কোন এক পুরুষতান্ত্রিক নারী বলেছেন, নারীরা পুরুষের প্রিয়ভাজন হতে পারে না বলেই তারা নারীবাদী হয়ে উঠে৷ আবার কেউ কেউ বলেন বেশীরভাগ নারীবাদীরা ডিভোর্সী৷ তাই তারা পুরুষদের বিরুদ্ধে কথা বলে৷ আবার কেউ বলেন নারীবাদীদের মেনোপেজের পর তারা নারীবাদী হয়, কারণ তখন যৌন চাহিদা থাকে না৷
নারীবাদীরা যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ সব নারী তার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন না৷ আবার সব নারীই নারীবাদী হয়ে উঠতে পারেন না৷ যারা নারীবাদী হয়ে উঠেন তারা মননে নারীর স্বাধীনতা ও নারী পুরুষের সমঅধিকার লালন করেন৷ নারীর প্রতি সমাজের বৈষম্যকে তুলে ধরেন৷ আর এই বৈষম্যের ধারক হলো পুরুষ এবং পুরুষতন্ত্রের মনগড়া নিয়মনীতি৷ এর সাথে আছে পুরুষতান্ত্রিকতা লালনকারী কিছু নারী৷ যারা নিজের জীবনে সেটা বহন করেন এবং অন্য নারীকেও সেই বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে ভালোবাসেন- যার দ্বারা নারী প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে, শারীরিক ও মানসিক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ নারীবাদীরা সেইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং সেখানে পুরুষতন্ত্রের ধারক পুরুষের কৃত অন্যায়গুলোকে আঙ্গুল দিয়ে চিহ্নিত করেন৷
সংসার জীবনে একজন মায়ের কাছেই পুরুষরা শিখে আসে কিভাবে তার মা জীবন যাপন করে আসছেন৷ সেখান থেকেই শিখে তিনি ঘরের বোন, বউ আর বাইরের নারীদের সাথে তেমন ব্যবহার করছেন৷ সেজন্য ঘর থেকেই এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে৷ নারীরা সম অধিকার পেলে তার যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে পারবে৷ এ সমাজ একজন পুরুষকে যেভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেভাবে একজন নারীকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তা করে না৷ কারণ তারা মনে করে নারী থাকবে ঘরে৷ স্বামী সেবা, গৃহস্থলীর কাজ এবং সন্তান লালন পালন করাই নারীর দায়িত্ব৷
কিন্তু যখন একজন নারী শিক্ষিত হয়ে চাকরী করে তখন সে স্বভাবতই তার স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে৷ তখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তার এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারে না৷ তাই প্রতি স্তরে নারী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য নিজে প্রতিবাদী হয়৷ আর তখন পুরুষরা সেই নারীকে পুরুষ বিদ্বেষী বলে আখ্যায়িত করে৷ তারা বলে নারীরা বাড়াবাড়ি করছে৷ তাদের মানতে চায় না৷
সংসারে নারী পুরুষের একে অন্যের সম্পর্কে থাকতে হবে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ৷ কিন্তু সেটার অভাব দেখা দিলে নারী তখন সংসার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ তখনই নারী হয়ে যায় পুরুষের চোখে নষ্টা৷ আসলে পুরুষতন্ত্র কি পুরুষকে কিছু ভালো কিছু দিচ্ছে? শুধু সংসার চালানোর দায়দায়িত্ব আর নারীর প্রতি গর্জে উঠার শক্তি৷ একজন নারী শিক্ষিত হয়ে চাকরী করলে সে সংসারের দায়িত্ব নিতে পারে সেটি তো পুরুষদেরই লাভ৷ ব্যক্তি পুরুষের সাথে নারীবাদীদের কোন সংঘর্ষ নেই৷ যেটা আছে সেটা হলো তার লালন করা পুরুষতন্ত্রের মানসিকতার সাথে৷
নারী স্বাধীনতা পেলে নষ্ট হয়ে যায় সেই ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ নারীবাদীদের পুরুষ বিদ্বেষী না বলে তারা যেসব বৈষম্যের স্থানগুলো চিহ্নিত করছে সেগুলোকে আমলে নিয়ে তা বিলোপ সাধনের জন্য পুরুষ ভাইরা আসুন কাজ করি৷ নারীকে তার যোগ্য আসনে বসানোর চেষ্টা করি৷ নারীদের এগিয়ে দেয়া মানে পুরুষদের পিছিয়ে দেয়া নয়৷ নারী পুরুষ সমভাবে লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়া৷ যার প্রতিফলনে সমাজে বিদ্যমান সহিংসতার মূল উৎপাটন করা সম্ভব৷
জাগরণীয়ার ইমেইল থেকে