সৌন্দর্য বিচারের মাপকাঠি কী?
প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৫২
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের ফলাফল ঘোষণা থেকেই বিতর্কের শেষ নেই। বিচারকমণ্ডলীর রায়কে পাশ কাটিয়ে, উপস্থাপকের ঘোষিত বিজয়ীর নাম ভুল আখ্যা দিয়ে আয়োজকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে মিস বাংলাদেশ ঘোষণা করার পর থেকেই শুরু হয় গুঞ্জন। এর পরপরই এভ্রিলের বিয়ের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল এবং বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে আবারো তোলপাড় চারদিক।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যটা কী? সৌন্দর্য আর মেধার সমন্বয় যদি হয় মূলকথা তাহলে তা বিচারের মাপকাঠি কী? কীসের ভিত্তিতে প্রতিভার অন্বেষণ করা হয়? সুন্দরের সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিতের সম্পর্ক কী? যদি দৈহিক সৌন্দর্য বিচার করাই উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে মেধা যাচাইয়ের নামে প্রহসনের দরকার কী?
বিউটি কন্টেস্টে যারা বিজয়ী হন, তারা বেশিরভাগই মডেলিং বা সিনেমায় অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হন কেন? মডেলিং বা অভিনয়ে আসতেই পারেন কিন্তু ক্যারিয়ার হিসেবে অন্যান্য চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রে তারা প্রায় অনুপস্থিত কেন? তাহলে কী ধরে নেব সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে শুধু মডেল আর অভিনেতাই আমরা পাবো? নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি তো সবাই পারে না। সেক্ষেত্রে এমন বিশাল মঞ্চে এসব বিষয়ে অজ্ঞ, আনাড়ি প্রতিযোগীদের দিয়ে নাচ, গান, অভিনয় করিয়ে হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার কোনো প্রয়োজন আছে কী?
প্রতিযোগীদের কী নিজেদের জীবনের কোনো বিশেষ সাফল্য, ব্যর্থতা, অর্জন, প্রাপ্তির গল্প বলবার সুযোগ দেয়া হয়, যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে একেকটি হার না মানার, যুদ্ধজয়ের গল্প অথবা লড়াই করে বাঁচার স্বপ্নের কথা? হাস্যকরভাবে হাত পা নেড়ে নাচ কিংবা ভুল উচ্চারণে, বেসুরো গানে, অভিনয়ে না ঘরকা না ঘাটকা ধরণের সংস্কৃতি তুলে ধরার চাইতে তা অনেক অর্থবহ করে তুলতে পারে না কী এ সুবিশাল আয়োজনকে?
যে মেয়ে বাইকার হিসেবে নাম কুড়িয়েছে, তার কাছ থেকে উল্টোপাল্টা নাচ-গান না দেখে বরং বাইক চালানোর কারিশমা দেখতে চাওয়া যেতো। তা অনেক দৃষ্টিনন্দন হতো, অভিনব হতো।
গ্রুমিং সেশনে আচরণ, আদবকায়দা, নৈতিক দিকগুলো সম্বন্ধে নজর দেয়া উচিত। মিস বাংলাদেশ প্রিলিমিনারী রাউন্ডের অন্যতম বিচারক আজরা মাহমুদের একটি কথা ভালো লেগেছে - "কনফিডেন্স আর ওভার কনফিডেন্স- দুটোর মধ্যে একটা ফাইন লাইন আছে"। একইভাবে সাফল্যে পৌঁছানোর জন্য সাধনা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা যেমন আবশ্যক, সাফল্য পাবার নেশায় অতিরিক্ত ডেস্পারেট হয়ে যা খুশি বলা বা করাটাও অশোভন, অমার্জিত।
একজন কৃষকের সন্তান যেন নিজেকে গর্বের সাথে কৃষকের সন্তান বলেই পরিচয় দিতে পারে তেমন একটি প্ল্যাটফর্ম চাই। জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল বাল্যবিবাহকে কাঁচকলা দেখিয়েছেন, এটি তার জীবনের লড়াইয়ের গল্প, এই সাহসিকতা উদাহরণযোগ্য । বাইকার হিসেবে নিজেকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয়ে তুলে ধরতে পারাটাও তার অনেক বড় অর্জন। কিন্তু তিনি যে একটি সাধারণ, দরিদ্র পরিবারের সন্তান - তা বলার মতো সৎ সাহস যখন দেখাতে পারেন না, তা আমার কাছে হঠকারিতা মনে হয়।
বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে ঘিরেও আমার ওই একই প্রশ্ন, প্রতিযোগীদের জীবন থেকে তারা তার সাফল্য, ব্যর্থতা, লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প জানতে চায় কী? জানতে চায়, তাদের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে কোনো গৌরবগাথা? শিক্ষাব্যবস্থা, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক অবস্থা, লিঙ্গ বৈষম্য পরিস্থিতির কথা?
এমন হলে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগীরা যে বিশ্বমঞ্চে ওঠেন সেখান থেকে কোটি কোটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, পথ দেখাবে এমন অসংখ্য জীবনের গল্প আমরা জানতে পারতাম ! সত্যিকার অর্থে বিশ্বসেরা কিছু সুন্দর মানুষের দেখা আমরা পেতাম!
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী'র ফেসবুক থেকে