ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে কি ধর্ষণের হার কমানো যায়?
প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৪
যে দেশের জনগণের মধ্যে নিজের হাতে আইন তুলে নেবার প্রবণতা যতো বেশী, সে দেশে আইনের শাসনও ততো খারাপ। অথবা, কথাটা এভাবেও বলা যায়, যে দেশে আইনের শাসন যতো খারাপ, সে দেশের জনগণের মধ্যে নিজের হাতে আইন তুলে নেবার প্রবণতাও যতো বেশী।
যে দেশের শিক্ষিত জনগণকে রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে এবং অপরকে আইন মেনে চলার উৎসাহ দিতে দেখা যায় বেশী, সে দেশের অশিক্ষিতরাও শিক্ষিত হয় দ্রুত। আমাদের দেশের শিক্ষিত জনগণের মধ্যেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আর আইন মেনে চলার প্রবণতা ভয়াবহ রকমের খারাপ। তাই এই দেশে অশিক্ষিতরা ধীরে ধীরে শিক্ষিত হবে- দূরের কথা, উল্টো শিক্ষিতরাই দ্রুত অশিক্ষিত হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের যে সকল দেশে ধর্ষণের হার কম, খবর নিয়ে দেখুন, সে সব দেশে ধর্ষকদের লিঙ্গ কেটে ফেলে দিয়ে ধর্ষণের হার কমানো হয়নি। যে সব দেশে চুরি, ডাকাতি বা দুর্নীতির হার কম, তারা গণপিটুনি দিয়ে চোরকে মেরে ফেলে এসব অপরাধ কমাতে সক্ষম হয়নি। বরং এ রকম বর্বর আইন প্রচলিত আছে- এসব দেশেই ধর্ষণসহ সকল অপরাধের মাত্রা অনেক বেশী।
বাংলাদেশের যে সকল উচ্চশিক্ষিত সচেতন (?) নাগরিকেরা ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তনের বৈধতা চান, তারা আসলে একইভাবে চোরের হাত কর্তনেরও বিধান চান।
আপনাদেরকে বলছি, আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবার অধিকার দাবী করছেন, আপনারা দেশ আর সমাজকে মধ্যযুগে নিয়ে যাবার আন্দোলন করছেন, আপনারা দেশে শরিয়া আইনের মতো অসভ্য, বর্বর আর আদিম আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন।
ধর্ষণ অবশ্যই জঘন্যতম অপরাধ, আর তার শাস্তি হওয়া উচিত যাবজ্জীবন কারাদন্ড। একটা সভ্য রাষ্ট্রে ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তন তার শাস্তি হতে পারেনা; এটা আইন হাতে তুলে নেয়া। - আর এ কথা বলা মানে ধর্ষকের প্রতি সহানুভূতি দেখানো নয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলা।
তাছাড়া আত্মরক্ষার জন্য কোনো নারী একজন পুরুষের লিঙ্গ কেটে ফেললেও ২টা প্রশ্ন থাকে-
১. ধর্ষণের আগেই ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। আসলেই ধর্ষণ হয়েছে কিনা, পুরুষটির ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিলো কিনা- আদালত সেটা কিভাবে প্রমাণ করবে?
২. একজন নারী দাবী করলো-কেউ একজন তাকে ধর্ষণের উদ্দ্যোগ নিয়ে লিঙ্গ হারিয়েছে। কিণ্তু আদালতে আসামীর অপরাধ প্রমাণই করা গেলো না। অথচ সে লিঙ্গটা হারালো। তখন কী হবে?
আর নারীরা আত্মরক্ষার নামে ব্লেড দিয়ে পুরুষের লিঙ্গ কাটার সংস্কৃতি চালু হয়ে গেলে এর অপব্যবহার হবার সুযোগ আছে। তাছাড়া একটা গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে ধর্ষণের শাস্তিতো আর লিঙ্গ কর্তন নয়।
একটা দেশ বা সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে আগে সে জাতিকে শিক্ষিত হতে হয়, সভ্য হতে হয়। আর শিক্ষিত বা সভ্য হতে হলে সমাজের মানুষগুলোকে মানবিক হতে হয়। ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে আর চোরের হাত কেটে বিশ্বের কোনো জাতি সভ্য হয়েছে- এ রকম ইতিহাস দেখাতে পারবেন?
একটা অপেক্ষাকৃত ধর্ষণমু্ক্ত আর অপরাধমুক্ত সমাজে বসে লেখাটা লিখছি। ধর্ষকের লিঙ্গ বা চোরের হাত কাটার জন্য এ মুহুর্তে যারা ব্লেড হাতে বসে আছেন, তারা হয়ত আমার কথা বুঝতে পারবেন না। তবুও অনুরোধ করবো, ভারতবর্ষের মতো আইনের শাসন চান? আরবের মতো শরিয়া আইন চান? নাকি স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মতো মানবিক অপরাধমুক্ত সমাজ চান? - সেটা একহাতে ব্লেড আর আরেক হাতে জুতা নিয়ে লিখতে না বসে আগে কিছুটা পড়াশোনা করুন। শিক্ষা, সভ্যতা আর মানবতা ধর্ষণ কমায়।
লেখক: ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট