কিভাবে জাকির আল নায়েকের ভিডিও জঙ্গি বানায়?
প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৬, ০১:১৮ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬, ০১:২৪
রোহান ইমতিয়াজ- গুলশান জিম্মির জঙ্গি
ইব্রাহীম ইয়াজধানি- আইএস সাস্পেক্ট ফ্রম হায়দ্রাবাদ
আয়াজ সুলতান- আইএস সিম্পাথাইজার ফ্রম মুম্বাই
নাজিবুল্লাজ জাজি– নিউ ইউর্কের বোমা হামলার সন্ত্রাসী এবং চক্রান্তকারী
কাফিল আহমেদ- লন্ডনে এ সুইসাইড হামলার চক্রান্তকারী
রাহেল শেইখ- ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ের ট্রেন ব্লাস্টের সন্ত্রাসী
এদের সবার মধ্যে মিলটা কি জানেন! এরা সবাই জাকির আল নায়েকের ভক্ত এবং তাকে দেখেই জঙ্গিতে আসার জন্য ইন্সপায়ারড হয়েছে।
গত পাঁচদিন আমি টানা জাকির আল নায়েক বহু কষ্ট করে শুনেছি। ২ ঘণ্টা তার সন্ত্রাসবাদের উপর কথা শুনেছি এবং একটা জায়গায় ইনোসেন্ট মানুষ মারাকে সমর্থন জানায় নি। তাইলে জঙ্গি হয় কেমনে তার কথা শুনে! আসছি সে বিশ্লেষণে! পাঁচদিন শুনে এই বিশ্লেষণ! সামনে আরও শুনলে, ইলজিক্যাল আরও কিছু বের করতে পারব!
জাকির আল নায়েককে ইউকে তে ব্যান করা হয়েছিল তিনটা স্পিচের কারণে। প্রথমটা ছিল এরকম “আমি সব মুসলিমকে টেরোরিস্ট হতে বলি”। এইটুকু এসেছিল ইউকের সংবাদপত্রে। কিন্তু জাকির আল নায়েক পরে প্রেস ডেকে ডিফেন্ড করে সে কথা। তার পুরো বক্তব্য ছিল “আমি সব মুসলিমকে টেরোরিস্ট হতে বলি, তখনই যখন সে চোখের সামনে ডাকাতি দেখবে, এন্টি সোশ্যাল এলিমেন্ট দেখবে। সন্ত্রাসবাদের প্রায়োগিক অর্থ আমি জানি। সেই হিসেবে একটা মানুষেরও ইনোসেন্ট মানুষ মারার অধিকার নেই”। ভাল কথা, এই কথা পুরোপুরি শুনলে নির্দোষ মনে হয়!
দ্বিতীয় স্পিচ ছিল লাদেনকে সমর্থন করে কথা। সে বলেছিল, “আমি লাদেনকে চিনি না, জানি না, দেখিও নি! লাদেন যদি ইসলাম শত্রুদেরকে দমন করে তবে সে আমার কাছে টেরোরিস্ট না”। জাকির আল নায়েকের ভাষ্যমতে এটা ১৯৯৮ সালের স্পিচ! ইচ্ছা করে ভাইরাল করা হয়েছে ৯/১১ এর পরে। ইন্টারনেট বলে, ৯৬ এর দিকেই আল কায়েদা তার ধংসযজ্ঞ জানান দিচ্ছিল আফগান ওয়ার এর মাধ্যমে। আল কায়েদার ফাউন্ডারকে এই ডিফেন্ড করাটা কতটুকু যৌক্তিক ছিল? (এটা নিয়ে অনেক তর্ক আছে)
তৃতীয় স্পিচ ছিল ইহুদীরা মুসলমানের শত্রু। মায়িদা সুরার কথা উল্লেখ করে সে এই স্পিচ দেয়। তিনি বলেন, “সব ইহুদী না, অনেক ইহুদী ভাল। কিন্তু ইন টোটালে তারা মুসলমানের শত্রু। কিন্তু তাদের মারতে বলে নি”। ইউকে কিংবা কানাডার মত ইহুদী অধ্যুষিত দেশে দাঁড়িয়ে সে বলছে মুসলমানদের শত্রু তোমরা! এইটা আহাম্মকি না এক্সট্রিমিস্ট! সেটা ঠিক করার দায়িত্ব আপনি নেন। বাংলাদেশে কোন পুরোহিত এসে যদি বলে, "হিন্দু ভাই বোনেরা, মুসলমান তোমাদের জাতের শত্রু। মেরো না। কিন্তু জেনে রাখো শত্রু"। আপনি ঐ পুরোহিতকে ব্যান করতেন না? ব্যান তো দূরের থাক, দেশের এই সময়ে তার কল্লা যেতো! কানাডা, ইউকে, ইউএস কিংবা অস্ট্রেলিয়া তো ব্যান করেছে কেবল।
জাকির আল নায়েক একটা কথাও বানিয়ে বলেনি। মোদ্দা কথা, এইগুলা কুরানের কথাই। সে প্রিচ করেছে মাত্র। দোষ কি তার? না তার scripture এর?
গুলশান হামলার প্রতিক্রিয়া সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদ ঘটনায় সে এক কথা বলে বেড়িয়েছে “নির্দোষ মানুষকে মারা ইসলাম পরিপন্থী কাজ। বহু মানুষ আমার ভিডিও দেখে, কেউ যদি সেসব দেখে মিসইন্টারপ্রিট করে জঙ্গি হয়। আমার দোষ না"।
চলুন তার ভিডিও দেখে জঙ্গি বানাই এবার!
• তুমি বলছো ইহুদী তোমার শত্রু (মারতে মানা করেছে)।
• তোমার scripture এ লেখা আছে “অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। ( সুরা তওবা– ৯.৫) । (এজন্য গুলশান জিম্মিদের সুরা জিজ্ঞেস করেছিল, পারলে ছেড়ে দিচ্ছিল। না পারলে...)
• তুমি বলছ এন্টি সোশ্যাল এলিমেন্টের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সন্ত্রাসী হতে (অথচ এন্টি সোশ্যাল এলিমেন্টের সংজ্ঞা দাও নি)
• তুমি লাদেনের সম্পর্কে জানার আগে তাকে সন্ত্রাসী বলনি, কিন্তু ৯/১১ এর পরে কি বলেছ?
• তুমি বলেছ ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারত পরাধীন ছিল! ভারতের বীররা ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে! মুসলিম সমাজ এখন পরাধীনতায় আছে, তাই সংগ্রাম করছে। ভারতের বিদ্রোহীরা সারা বিশ্বে কি গিয়ে গিয়ে ইংরেজ মেরেছে? আল কায়েদা তো তাই করছে। সে কি শুধু আফগান ওয়ারে সীমাবদ্ধ ছিল? নাকি সারা বিশ্বে ঘাঁটি বানিয়েছে? কি করে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে ইসলাম সন্ত্রাসবাদ তুলনা কর? ব্রিটিশ শাসনের উদ্বুদ্ধ নকশাল বাহিনী কলকাতা ছাড়া আর কোন দেশে ছিল? (আফগান ওয়ার সম্পর্কে আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান। আমেরিকা বা সোভিয়েতের ধান্দা নিয়ে আরেকদিন কথা বলব।)
এই এতকিছুর পরে একটা ছেলে তোমার ভিডিওগুলো দেখে যদি বলে, ইহুদীরা শত্রু, হিন্দু শত্রু, খ্রিস্টান শত্রু, নাস্তিক শত্রু, বিধর্মী মানেই কাফির, কাফির মানেই শত্রু, শত্রু মারব। কারণ শত্রুরা এন্টি সোশ্যাল এলিমেন্ট। তোমার তখন কি বলার থাকতে পারে?
জাকির নায়েক, পারলে একটা পাবলিক কনফারেন্স কর, দেশে দেশে। কাফির, নাস্তিক, মুশরিক, কনসেপ্ট উঠিয়ে মানুষের কথা বল।
সেটা সম্ভব না, তাই না! তোমার দোষ নাই। scripture এ যা আছে তাই বলতে হবে! চোখ বুজে।
মারজিয়া প্রভা'র ফেসবুক থেকে