প্রসঙ্গ: জঙ্গি ক্রাশ
প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০১৬, ০৪:০৯
দেশে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারের কারণে পোশাকের জগতে বিপ্লব ঘটেছে। যার প্রভাব ছেলে মেয়ে উভয়ের মধ্যেই পড়েছে। কম পয়সায় ভাল পোশাক পাওয়া খুবই সহজ। একইভাবে বিপ্লব ঘটেছে ঘড়ি এবং স্যান্ডেলে। দেশ ইসলামি-করণের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় ছেলেরা পশ্চিমা আধুনিকতায় যতটুকু এগিয়ে গিয়েছে, মেয়েরা সেই তুলনায় কম। অনেক মেয়েই ঘরে ট্রাউজার হাফ প্যান্ট টিশার্ট পরে অভ্যস্ত থাকলেও বাইরে বের হয় সালোয়ার কামিজে।
এক শ্রেণি ঢাকনার উপরে সালোয়ার পরে নারীর পা দেখানো ট্যাবু ভাঙছে, আরেক শ্রেণি হিজাব বোরকার মধ্যপ্রাচ্যের স্টাইল রপ্ত করছে। মাথার উপরে যে যত বেশি হিজাবের ভাঁজ ফেলতে পারে সে তত বেশি ইসলামী স্টাইলিশ। শাড়িতেও বাঙালি মেয়েরা অনন্য, কোন পার্টি, বিয়ে বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবাই কম বেশি শাড়ি পরতে অভ্যস্ত। যেহেতু আমাদের সমাজে এখনো অনেক মেয়েকে শরীর ও রূপ বেচে খেতে হয়, পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য পোশাকের আধুনিকতার বিকল্প নেই এটা তারা জেনে গেছে। মাসে একবার পার্লারে যায় না এমন মেয়ে খুব কম পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে ছেলেদের রূপ দেখিয়ে বাঁচতে হয় না, চলতে হয় না বলে তারা সব ধরনের পোশাকের আধুনিকতাটাকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখেনি। তারা আরামদায়ক, সহজ পশ্চিমা পোশাকটাকেই বেছে নিয়েছে। আবার ঘরে লুঙ্গিটাও রেখেছে, বাদ দিয়ে দেয়নি। কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে তাদেরকে লুঙ্গি পাঞ্জাবী বা ফতোয়া পরে যেতে দেখা যায় না। তারা যায় সেই প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, টাই-স্যুট ইত্যাদি পরে। মেয়েরা কিন্তু এখনো রাবীন্দ্রিক লেস ওয়ালা ব্লাউজ আর এক পেড়ে শাড়িতে বেশ আধুনিক। ছেলেরা পোশাকের দিক দিয়ে আধুনিকতা আনলেও, আমার মনে হয় চুলের স্টাইলে বাংলাদেশের ছেলেরা কিছুটা পিছিয়ে। যেহেতু মুখের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য চুল টা একটা ফ্যাক্ট সেটা এখনো তারা বোধ হয় বুঝে উঠতে পারেনি। অনেক ছেলেকেই দেখেছি হাফ প্যান্ট টিশার্ট স্যান্ডেল ঘড়িতে বেশ স্মার্ট মনে হলেও চুলের স্টাইলের কারণে গেঁয়ো মনে হয়। তারা সেটা হয় বুঝে না, আর না হয় পারিবারিক ভাবে একটা আঁতেল টাইপের চুলের স্টাইল রেখে তারা অভ্যস্ত।
এখন আসি ক্রাশের ব্যাপারে। আপনি কার উপর ক্রাশ খাবেন, কার উপরে খাবেন না, সেটা আপনার ব্যাপার। কেউ খায় রূপে , কেউ খায় স্মার্টনেসে, কেউ খায় গুণে। কিন্তু আপনার মা বোনের ধর্ষকের উপর আপনি ক্রাশ খাবেন না, এটা সবাই ভেবে নেয় সাধারণ দৃষ্টিতে। ধর্মের বাহক নারীদের উপরেও অনেক সেক্যুলার নাস্তিক ক্রাশ খায়, ওটা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণীয় হয়। এখানেও তারা পুরুষালি সুবিধাবাদী একটা ভূমিকা পালন করে। যদিও সে একটা ধর্মের নিষ্পেষণ পীড়নকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করে, তবুও তা গ্রহণযোগ্য। মেয়েটা সুন্দর স্মার্ট কিনা, ভাল 'মাল' কিনা সেটাই এখানে মুখ্য।
মেয়েদেরকে বলছি আপনাদের মাথাটা একটু কাজে লাগান। একবার ভাবুন কোন ধর্ম আপনাকে যদি ঐশ্বরিক নিয়ম কানুনের দোহাই দিয়ে আপনার স্বাভাবিক জীবন প্রবাহকে বিঘ্নিত করে, সেই ধর্মকে আপনি লালন করবেন কি করবেন না? সেক্ষেত্রে আপনি কোন স্টাইলটা নিজের মধ্যে গ্রহণ করবেন করেন। কিন্তু সেই ধর্মের বাহক, ধারক, জঙ্গি, খুনির উপরে যদি আপনি ক্রাশ খান, তবে বুঝতে হবে আপনি আপনার মাথা সেই সব ধর্মান্ধ মেয়েদের মত অকার্যকর রেখেছেন, অথবা আপনি লাইফে কোন স্মার্ট ছেলে দেখেন নাই। ছেলেদেরকে স্মার্ট বানিয়ে নেওয়া যায়, আপনার মত আপনি তাকে বানিয়ে নিন। কিন্তু কার উপরে ক্রাশ খাওয়া যায়, কার উপরে খাওয়া যায় না সেটা ভাবার মত মগজটা আগে তৈরি করুন। তা না হলে উপরের ধর্মান্ধ নারীটির বর সেক্যুলার পুরুষটিও আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে।
অন্নপূর্ণা দেবী’র ফেসবুক থেকে