ধর্মীয় গ্রন্থে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদের উল্লেখ নেই
প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০১৬, ১৯:৫৮
আফ্রিকা মহাদেশে ধর্ম এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন। যৌনাঙ্গচ্ছেদ তাদের মধ্যে একটি৷ তবে মালিতে সম্প্রতি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন নারী ও ধর্মীয় নেতারা।
মেয়েরা যেন সহবাস উপভোগ করতে না পারে বা সতীত্ব রক্ষার নামে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেব অনুযায়ী, ঐ দুই মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রায় ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন নারী অমানবিক এই ঘটনার শিকার হয়েছেন।
ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে তাদের শরীরে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অমানবিক কাজটি করানো হয় অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা। এছাড়া, কোনো ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই এ কাজটি করা হয়ে বলে এতে যেমন প্রচুর রক্তপাত হয় তেমন ব্যথাও হয় ভীষণ। বাচ্চা প্রসবের সময় এই নারীরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেন তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল। এর ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন৷ অনেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মারাও যায়।
মালির অধিবাসী ডিকো অনগোয়িবা যখন ছোট ছিলেন, তখন তাঁকেও এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনা ছিল নিষিদ্ধ। এখন তাঁর বয়স ৪০ বছর। অথচ মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর যৌনাঙ্গচ্ছেদ হয়েছে। নিজের প্রথম ৬ মেয়ের ক্ষেত্রেও অনগোয়িবা এই কাজ করেছেন। কিন্তু এখন তার উপলব্ধি হয়েছে, এর ফলে সন্তান জন্মদানে বেশ কষ্ট হয় তাঁর। আর তাই তার ছোট দুই মেয়ের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত খুব সহজ নয়, কেননা সমাজের দ্বারা প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় থাকে। আর তিনি না করলেও সমাজের লোকজন জোর করে তাদের করে দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার ছিল ‘জিরো টলারেন্স টু জেনিটাল মিউটিলেশন' বা আন্তর্জাতিক যৌনাঙ্গচ্ছেদ বিরোধী দিবস দিবস। মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে বেসরকারি সংস্থা টোস্তান সেদিন মালির রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই সংগঠনটিতে আফ্রিকার আটটি দেশের ৭ হাজার কর্মী কাজ করেন।
টোস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মলি মেলচিং জানান, এই আয়োজনের ফলে অনেক মা তাদের সন্তানদের এই অমানুষিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন। তবে তিনি বলেন, এ জন্য সমাজে নারীর প্রতি সম্মান বাড়ানোটা খুব জরুরি। এমন সমাজ গড়ে তুলতে হবে যেখানে অভিভাবকরা তার সন্তানটিকে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে দিবেন না এবং যিনি ঐ নারীকে বিয়ে করবেন তিনিও চাইবেন যে মেয়েটির যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করা হোক।
এদিন অনগোয়িবা ঐ যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মালির ৮৯ ভাগ নারী ও মেয়ে শিশুরা যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার। ফান্তা করোমা নামে একজন গৃহিণী জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তিনি এফজিএম এর বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। কেননা যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে এক মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় যে কন্যা সন্তানটি হয়েছে, তারও জীবন সংশয় রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত ৮ কোটি ৬০ লাখ নারী ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিস্থিতির শিকার হবে বলে জানিয়েছে ইউএনএফপিএ।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারাও। ১৪টি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র মোসোকোরা সিদিবে অবশ্য জানান, তারা তাদের সম্প্রদায়ে জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এফজিএম এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন।
এটিকে ধর্মীয় প্রথা হিসেবে চালালেও বর্তমানে কিছু ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কথা বলা নেই। এসব নেতারা টোস্তানের সাথে তিন বছর ধরে কাজ করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে বিষয়টি তুলে ধরা, যাতে প্রতিটি সম্প্রদায় সমাজ সচেতনে সোচ্চার হয় এবং যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করে।
সূত্র: ডয়েচ ভেলে