যে কারণে নারীরা বেশিদিন বাঁচেন
প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৫৭
"উইমেন্স আর লিভ লঙার দ্যান মেন" এমন ক্যাপশনে সামাজিক মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরণের কৌতুকপ্রদ পোস্ট দেখে থাকি। পোস্টগুলোতে সাধারণত দেখা যায়, কোনো পুরুষ বোকামি স্বরুপ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, যেটা তার জন্য মৃত্যু ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে এ ধরণের পোস্টে প্রবাদটি মজার ছলে ব্যবহার করা হলেও সত্যিকার অর্থেই পুরুষের চেয়ে গড় আয়ুতে এগিয়ে আছেন নারীরা। তবে গবেষণায় এসেছে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কারণে একজন পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশিদিন বাঁচেন।
নারী ও পুরুষের শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট এবং সামাজিক কারণ উল্লেখ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় বলেছে, মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা বেশি শারীরিক কসরত করতে পারলেও জিনতত্ত্ব, হরমোন এমনকি সামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে অধিক আয়ুর অধিকারী হচ্ছেন নারীরা।
জিনতত্ত্ব
জিনতত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, জিনগত কারণে একেবারে ভ্রূণ অবস্থা থেকেই নাকি এমন বিভাজন তৈরি হয়ে যায়। যদিও দু’টি ভ্রূণের ক্ষেত্রেই ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের উপস্থিতি থাকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২২ জোড়া ক্রোমোজোম এক রকম হলেও শেষ একটি জোড়া কিন্তু আলাদা। ছেলেদের ক্ষেত্রে যা ‘XY’ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ‘XX’। গবেষণায় দেখা গেছে এই ‘Y’ ক্রোমোজোমটিই আসলে বিভিন্ন রোগের ধারক এবং বাহক। তাই পুরুষদের রোগভোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি।
হরমোন
পুরুষদের শরীরে থাকা টেস্টোস্টেরন হরমোনটি দীর্ঘ দিন ধরে হৃদ্যন্ত্রের পেশিতে এসে জমা হতে থাকে। যা বয়সকালে হার্টের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে, মেয়েদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি হার্টের জন্য মহৌষধের মতো কাজ করে। তাই মেয়েদের মধ্যে হার্ট সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
জননতন্ত্র
পুরুষ ও মহিলাদের জননেন্দ্রীয়ও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। পুরুষদের শরীরে থাকা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি নানা ধরনের রোগের জন্ম দেয়। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মহিলাদেরও স্তন, জরায়ুও সুরক্ষিত নয়। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, এ ক্ষেত্রে পুরুষদের জননেন্দ্রীয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
বিপাকহার
মেয়েদের দীর্ঘায়ু লাভের অন্যতম একটি কারণ হলো বিপাকহার। গঠনগত কারণেই মেয়েদের শরীরে ‘ভালো’ কোলেস্টরলের পরিমাণ পুরুষদের তুলনায় বেশি। যা হার্ট ভালো রাখার জন্য অনেক অংশে দায়ী। একটা বয়সের পর ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, মহিলাদের শরীরে মেদ জমতে দেখা যায়। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত স্থূলত্ব নিয়ে মেয়েদের তেমন সমস্যা হয় না। এর প্রভাব পড়ে বিপাকহারের উপর।
সামাজিক কারণ
পুরুষরা একসঙ্গে অনেকটা ভার বহন করতে পারলেও সারা দিন ঘর এবং বাইরে নানা ধরনের কাজ করেন মহিলারা। তাই শারীরিক কসরত বেশি হয় তাদেরই। এছাড়া মেয়েদের শরীর সন্তান ধারণের জন্য উপযুক্ত।
তাই এ কথা বলাই যায় পুরুষদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি কষ্টসহিষ্ণু।