দিনাজপুরে প্রায় ১২’শ বছর আগের বিষ্ণু মন্দির আবিষ্কার
প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৬, ২০:৪১
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার নিভৃত পল্লীতে প্রায় ১২’শ বছর আগের একটি বিষ্ণু মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। ১১’শ থেকে ১২’শ শতকে পূবর্ভারতীয় হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের গঠনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ এই বিষ্ণুমন্দিরটির খনন কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি দল।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী মাধবগাঁও। এই গ্রামের বুরুজ নামক স্থানে একটি উঁচু স্থান দীর্ঘদিন থেকেই এলাকাবাসী জানতো উঁচু ঢিবি হিসেবে। কিন্তু জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি দল জরিপ চালিয়ে শুরু করে এর খনন কাজ। টানা দেড় মাস এর খনন কাজ চালিয়ে তারা আবিষ্কার করে এটি একটি বিষ্ণু মন্দির।
খনন কাজে অংশ নেয়া দলের সদস্যরা জানান, খননের সময় প্রস্তর প্রতিমার ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সমপদস্থানক ভঙ্গীতে দন্ডায়মান প্রতিমার হাতে থাকা বিভিন্ন উপকরণ, যেমন, শঙ্খ, চক্র, গদা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, বিষ্ণুপ্রতিমার বনমালা শোভিত পায়ের ভগ্নাংশও পাওয়া গেছে।
এছাড়াও, পাথরের একটি দেবি প্রতিমার ভগ্নাংশও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা যায় যে, এটি একটি বিষ্ণু মন্দির ছিল।
খনন দলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও মহাস্থানগড় থেকে আসা অভিজ্ঞ ১৩ জন শ্রমিক এবং ২৬ জন স্থানীয় শ্রমিক কাজ করছেন।
খনন দলের পরিচালক জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন জানান, আবিষ্কৃত মন্দিরটি বাংলাদেশের প্রত্নস্থাপনার তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
তিনি জানান, মন্দিরটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। এই বিষ্ণুমন্দিরটি ১১’শ থেকে ১২’শ শতকে পূবর্ভারতীয় হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের গঠনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ বলে জানান তিনি। আর এটি খনন কাজ শেষ করতে আরও দেড় থেকে ২ মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর একটি বিষ্ণু মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে-এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসতে শুরু করেছে দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, একই উপজেলায় অবস্থিত উপমহাদেশের অন্যতম আকর্ষনীয় প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর নির্মিত কান্তজী মন্দিরের আগে এই মন্দিরটি নির্মিত। তাই তারা এটি সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন।
আবিষ্কৃত এই বিষ্ণু মন্দিরটি সংরক্ষনের মাধ্যমে প্রাচীন টেরাকোটা নির্মিত ঐতিহাসিক কান্তনগর মন্দিরের মতো এটিও একটি দর্শনীয় ও আকর্ষনীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে, এমন প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের।