৪ জুন ছাতনী গণহত্যা দিবস

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০১৭, ১২:০৮

অনলাইন ডেস্ক

৪ জুন ছাতনী গণহত্যা দিবস। ৭১ এর এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা নাটোরের ছাতনীতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও গণধর্ষণ চালায়।

ওইদিন রাতে গ্রামে হানা দিয়ে পুরুষদের ধরে দুই হাত পেছনে বেঁধে ছাতনী স্লুইচ গেটের কাছে গলা কেটে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রায় ৩০০ মানুষকে হত্যা করে।

সেদিনের সেই কালরাতের কথা মনে করে এখনও শিউরে ওঠেন এ অঞ্চলের বয়োবৃদ্ধরা।

ছাতনীর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৭১ এর ৪ জুন রাতে নাটোর রেলওয়ে স্টেশন  থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ছাতনী গ্রামে ঘিরে ফেলে বিপুলসংখ্যক পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। তারা সম্মিলিতভাবে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রামের অসংখ্য বাড়িতে আগুন দিয়ে লুণ্ঠন করে। রাতভর চলে গণধর্ষণ।

পরে স্থানীয় রাজাকার হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি থেকে পুরুষদের ধরে রাতের আঁধারেই ছাতনী স্লুইচ গেটে এনে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

সেই কালরাতের প্রত্যক্ষদর্শী হাফিজ উদ্দিন জানান, ছাতনীতে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি ছিল। তার নেতৃত্বে এখানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি গড়ে ওঠে। এখানকার বেশিরভাগ নারী-পুরুষই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এটাই ছিল তাদের অপরাধ। এ কারণেই নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর এমন বর্বর হামলা চালানো হয়।

এদিকে, দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও ছাতনী গণহত্যায় শহীদরা আজো পায়নি কোনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ কাজ ২০১২ সালে শুরু করা হলেও অর্থাভাবে সেটি আজও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

নতুন প্রজন্ম অনেকেই জানেন না ছাতনীর এই গৌরবগাঁথা, ৩০০ শহীদের আত্মত্যাগ। তাই এ এলাকার সচেতন মহলের দাবি ৭১ এ ছাতনীর শহীদদের আত্মত্যাগের কার্যকর স্বীকৃতি প্রদান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এ ইতিহাস সরকারিভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক।