ঝিনাইদহে ঘরে ঘরে বড়ি তৈরির উৎসব
প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৫
ঝিনাইদহের গৃহবধূরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ডালের তৈরি বড়ি বানাতে। শীতকে স্বাগত জানিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের বড়ি তৈরির উৎসব। প্রচন্ড শীতের মধ্যে পাড়া মহল্লার গৃহিণীরা একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে তৈরি এ মজাদার খাবার তৈরিতে বেশ ব্যস্ত।
শীতের এক সকালে ঝিনাইদহ কাঞ্চননগর গ্রামে গিয়ে একটি বাড়ির ছাদে কয়েকজন গৃহবধূকে বড়ি বানাতে দেখা গেলো। তাদেরই একজন মাজেদা বেগম বলেন প্রতি বছর শীত এলে চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন তারা। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করা হয় দীর্ঘদিন। পরে বিভিন্ন তরকারি রান্নার সময় বড়ি ছেড়ে দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
বড়ি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কালো কলাই ও চাল-কুমড়া। কুমড়ার অবর্তমানে অনেকে মুলা অথবা পেঁপেকে ব্যবহার করেন। বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাষকলাইয়ের ডাল খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সন্ধ্যায় চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কুরানি দিয়ে কুমড়া কুরিয়ে মিহি করে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে কুমড়ার পানি বের হয়ে ঝরঝরে হয়ে যাবে।
এবার কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবন দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। মিশিয়ে ঢেঁকি বা যাতায় পিষে পেস্টের মতো একটি উপাদান তৈরি করেন। এই উপাদান তৈরিতে তাদের খুব পরিশ্রম করতে হয়।
এক সময় বড়ির এ উপাদান তৈরি করতে কেবলমাত্র ঢেঁকি ব্যবহার করা হলেও বর্তমান ডিজিটাল যুগে বেশ পরির্বতন এসেছে। বর্তমানে ঢেঁকি যখন বিলুপ্তির পথে তখন এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিন। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে। এটা ভালো করে রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করে অনেকদিন পর্যন্ত রান্না করা যায়।
আরো কয়েকজন নারী জানান, একত্রিত হয়ে তারা বড়ি বানান। ধনী-গরিব সবাই এ বড়ির প্রতি দুর্বল। কেননা বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। এছাড়া বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।
একই ছাদে বড়ি দিতে আসা মাহী ও নুরজাহান জানান, শীত এলেই একে অপরকে বড়ি দিতে সহযোগিতা করা রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মেয়ে এসব শিখতে বা তৈরি করতে আগ্রহী না।
স্থানীয় কিছু নারী জানান, যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ বাড়িতে কুমড়া বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। সময়ের আবর্তে বড়ি- এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারপরও অনেক মানুষ বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।