আজ ঐতিহাসিক ২৫ মার্চ

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৬:০১

জাগরণীয়া ডেস্ক

আজ ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরপরাধ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এভাবে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। 

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম নৃশংসতম গণহত্যা। অপারেশন সার্চলাইট নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শহরসহ সারা দেশে রাতভর এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।’

সেই রাতে ভয়াবহতা ও মুক্তি সংগ্রামের শুরুর কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এক রাতেই ঢাকা শহর পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা ও  কার্যকর করা হয়েছে।’ এই বিচার কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি জানান, গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা ও বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানতে পারবে, দেশের পরবর্তী প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অংশ নিতে দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

দিনটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করছে। এখন এর রায় কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ প্রণয়ন করেছিলেন। সেই আইনের আওতায় অনেকের বিচার সম্পন্ন হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৭-এর ২০ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এর আগে একই বছরের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদে এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।’

গণহত্যা দিবসে উপলক্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেছেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।

এদিকে, ঐতিহাসিক ২৫ মার্চ (সোমবার) কালো রাত্রি উপলক্ষে রাত ৯টায় এক মিনিটের জন্য জরুরি স্থাপনা ও চলমান যানবাহন ছাড়া সারা দেশে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। 

এছাড়াও, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ও সব জেলা এবং উপজেলায় ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করাসহ সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার ওপর দূর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিকাল ৪টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘শিখা অনির্বাণে’ সমাবেশ ও গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে ১৪ দল। এরপর আলোচনা সভা করবে তারা। এদিকে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সামনে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করবেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো দুরভিসন্ধি করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। বাঙালি তখন বুঝতে পেরেছিল, স্বাধীনতা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। পাকিস্তানিদের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ স্বাধীনতার নির্দেশনা দেন। এরমধ্যেই বাঙালিদের ওপর সামরিক হামলার নীল নকশা চূড়ান্ত করে পাকিস্তানি বাহিনী। ২৫ মার্চের কালরাতে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তারা। রাতের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পরে ২৬ মার্চ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আপামর জনতা।

দিবসটি পালনের ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জানিয়েছে, সোমবার রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৮টি মশাল প্রজ্বালন করবেন তারা। সেই আলোর মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আলোর মিছিলের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের স্মরণে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হবে। জাতীয় গণহত্যা দিবসের ঘোষণাপাঠ করবেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

উল্লেখ্য, ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য ২০১৭ সালের ১১ মার্চ সংসদে বিল পাস করা হয়। ওই বছর থেকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত