বিজয়ের ৪৭ বছর

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির দিন। এই দিনে পাকিস্তানের অবর্ণনীয় নৃশংসতা থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনে বাংলার বুকে উড়েছিল স্বাধীন লাল-সবুজের পতাকা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ নির্যাতিতার বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ইতিহাস লেখা হয়েছিল এই দিনে। 

১৬ ডিসেম্বর (রবিবার) মহান বিজয় দিবস। এ বছর বিজয়ের ৪৭ বছর উদযাপন করছে জাতি।

৪৭ বছরের পথচলায় আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে নাক সিটকানো পশ্চিমা রাজ্য আজ বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিস্ময় প্রকাশ করে। নিজেদের ১৬ কোটি মানুষের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত প্রায় ১০ লাখ ‘রোহিঙ্গা’ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের দেশ হিসেবে সমালোচিত বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে প্রতিবেশী অনেক দেশ থেকেই এগিয়ে রয়েছে। 

বিজয়ের এই ক্ষণে সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে নিতে আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। জনগণের দোরগোড়ায় লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আসুন দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি, ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার । একটানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার কারণে আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে তৃণমূলের জনগণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। 

নানা কর্মসূচি

১৬ ডিসেম্বর (রবিবার) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বাংলাদেশে নিয়োজিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এ বছর ঢাকাস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত না হলেও দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে কুচকাওয়াজ হচ্ছে।

বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্তিতে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে দেশবাসী। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সাভার স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব শহীদের বেদী। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। এছাড়া প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সাজানো হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হচ্ছে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার  আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে ঢাকার রাজউক ভবন, লাল সবুজ আলোয় আলোকিত করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ভবন। বিজয় দিবস উদযাপনে আলোর খেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবনের দেয়ালে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবয়ব। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদিন উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর রাখা হবে উন্মুক্ত।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে  সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত