ভয়াল ও বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট আজ
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৫৭
আজ সেই ভয়াল ও বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
এই হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হন।
একুশে আগস্টের সমাবেশে বিকেলে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন।
সেদিনের সেই হামলায় আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হাত-পা, চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গু হয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ হানিফ মাথায় বিঁধে থাকা স্পিন্টারের যন্ত্রণা ভোগ করে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।
বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে খোদ রাজধানীতে প্রকাশ্যে চালানো হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভয়াল ও বীভৎস ওই হামলা। হামলার পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্নদিকে নেয়ার অপতৎপরতা চালায়। তবে দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলার নেপথ্যের নীলনকশা। দ্বিতীয় দফায় চার্জ গঠন হয়েছে, সে-ও সাড়ে পাঁচ বছর হল। এতদিনেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ওই ঘটনার মূল কুশীলবদের ১৮ জন।
আদালত ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বর্তমানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য চলছে। আসামিপক্ষের ১১ জনের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আসামি শেখ আবদুস সালামের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য চলমান রয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর এ মামলায় পরবর্তী সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এছাড়া ধার্য দিনে বিচারিক কার্যক্রমে আরও দু’জন আসামির পক্ষে ৬ জনের সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার আবেদন রয়েছে। সব মিলিয়ে ন্যক্কারজনক এ গ্রেনেড হামলার বিচার কার্যক্রমে চলছে এক ধরনের দীর্ঘসূত্রতা।
জানতে চাইলে মামলায় রষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর অন্যতম হল- তদন্তকালে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে এ মামলাটি বিপথে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
একপর্যায়ে হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগপত্রে না থাকায় তা অধিকতর তদন্তের জন্য যায়। অধিকতর তদন্তে ১ বছর ১০ মাস ২৯ দিন লেগেছে। এরপর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ গঠন করা হয়। প্রথম চার্জশিটে আসামি ছিল ২২ জন। অধিকতর তদন্তে আরও ৩০ জন যুক্ত হয়ে মোট আসামি হয়েছে ৫২ জন।
৪৯২ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া আসামিপক্ষ মামলাটির বিচার কাজ বিলম্বিত করতে এ পর্যন্ত পাঁচবার উচ্চ আদালতে গেছে। এতে ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণের জন্য অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক জেরাও করেছে। এতকিছুর পরও আমরা বিচার কাজের শেষ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।