জেনে নিন স্ট্রোক এর কারণ ও প্রতিকার
প্রকাশ | ১৯ জুন ২০১৭, ১৮:৩৩
স্ট্রোক (Stroke) রোগটির নাম শুনলে যদিও হার্ট অ্যাটাক এর কথা মনে আসে, স্ট্রোক আসলে মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কের কোনো স্থানের রক্ত নালী বন্ধ হয়ে গেলে বা ব্লক হলে ঐ স্থানের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্কের ঐ বিশেষ এলাকা কাজ করতে পারে না। এটিই স্ট্রোক রোগ। মস্তিষ্কের ঐ বিশেষ এলাকাটি শরীরের যে যে অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতো স্ট্রোক হলে সে সকল অংশের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্কের এক দিক নষ্ট হলে শরীরের উল্টো দিক বিকল হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের বাম দিকে ক্ষতি হলে শরীরের ডান দিক অচল/অবশ হয়ে যায়।
স্ট্রোক হবার পর এরকম শরীরের এক দিক অচল হবার নাম হেমিপ্লেজিয়া (hemiplegia) আর অবশ হলে বলে হেমিপেরেসিস (hemiparesis)। স্ট্রোক হলেই যে শরীরের কোনো পাশ চিরতরে অচল হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। কিছু ধরনের স্ট্রোক হলে সাময়িক কিছু অসুবিধার পরে মানুষ আবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্ত চাপ, ধূমপান করা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে থাকে। আগেই বলা হয়েছে যে স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের রক্ত নালী বন্ধ হবার কারণে তাই বোঝাই যায় যে যে কারণে রক্তনালী বন্ধ হয় সেই সেই কারণে স্ট্রোক হয়, যেমন ধমণীতে চর্বি বা ক্যালসিয়াম জমা, টিউমার হওয়া, ধমণীর প্রদাহ জনিত রোগ ইত্যাদি। এছাড়াও হার্ট বা অন্য ধমণী থেকে জমাট রক্ত ছুটে গিয়ে বা মাথায় আঘাত পাবার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।
স্ট্রোক হলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া তো হয়ই সেই সাথে কোনো একপাশের হাত-পা অবশ পা অচল হয়ে যাওয়া, বোধহীন হয়ে যাওয়া, বাকরুদ্ধ হওয়া, কথা জড়িয়ে আসা, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দেয়। বড় ধরনের স্ট্রোক হলে চার হাত-পা ই অবশ বা অচল হয়ে যেতে পারে।
স্ট্রোক এর রোগীকে মস্তিস্কের সিটি স্ক্যান (CT scan) পরীক্ষাটি করতেই হয়, এটি দ্বারা ঠিক কোথায় ক্ষতি হয়েছে বোঝা যায়, মস্তিস্কের এঞ্জিওগ্রাম (Angiogram) করেও এটা বোঝা যেতে পারে। অনেক সময় কারণ বের করতে ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram) ও করা লাগে, সেই সাথে যে সকল রোগ স্ট্রোক এর ঝুঁকি বাড়ায় রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করে সে সকল রোগের উপস্থিতি ও অবস্থাও জেনে নিতে হয়।
স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা অবশ্যই একজন নিউরোলজিস্ট (Neurologist) বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত। এই রোগের সুনির্দিষ্ট এমন কোনো চিকিৎসা নেই যাতে রোগী সাথে সাথে চিরতরে ভালো হয়ে যাবে। ধৈর্য ধরে রোগীর সেবা করতে হবে, সঠিক পুষ্টি ও তরল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, ঝুঁকি আছে এমন রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর পর সবচেয়ে বেশী যেটা প্রয়োজন তা হলো ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy)। তবে স্ট্রোক এর অবস্থা বুঝে এর সাথে আরো অন্য চিকিৎসাও যোগ করতে হতে পারে যা অবশ্যই একজন নিউরোলজিস্ট বিবেচনা করবেন।