এসিতে থাকার ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিকার
প্রকাশ | ২১ মে ২০১৭, ১৯:৪৪
ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে দাবদাহ। এই সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের চেয়ে আরামের আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু জানেন কি, দিনের পর দিন এসিতে থাকার বেশ কিছু খারাপ প্রভাব দেখা দেয় শরীরে।
দিল্লির বিএলকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার আর কে সিংহল জানাচ্ছেন, নিয়মিত এসি ঘরে থাকলে বেশ কিছু কুপ্রভাবে আক্রান্ত হতে পারে আপনার শরীর। একটি সর্বভারতীয় হিন্দি দৈনিককে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি মূলত ১০টি শারীরিক সমস্যার কথা বলেছেন, যা নিয়মিত এসি ঘরে থাকার ফলে দেখা দেয়। এসব সমস্যাগুলি জেনে নিন।
> এসি ঘরের তাপমাত্রা প্রাকৃতিক তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়। এমন পরিবেশে মানবশরীরকে তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য অধিক পরিশ্রম করতে হয়। তার ফলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
> সারাক্ষণ এসিতে থাকলে শরীরে রক্তসঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন অংশের মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প সৃষ্টি হয় এবং মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
> এসি ঘরে তাপমাত্রার অদলবদল হয় না। ফলে এসি ঘরে থাকতে থাকতে শরীরও এক ধরনের তাপমাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কোনও কারণে সেই তাপমাত্রার চেয়ে গরম বা ঠান্ডা অবস্থায় থাকতে হলে শরীর সেই তাপমাত্রার সঙ্গে চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। এর ফলে উদ্বেগ কিংবা স্ট্রেসের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
> দিনে অন্তত চার ঘন্টা এসি ঘরে থাকা যাঁদের অভ্যেস, তাঁদের মিউকাস গ্ল্যান্ড স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে তাঁদের সাইনাসের সমস্যা দেখা দেয়।
> এসির ফিল্টার যদি অনেক দিন পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে এসি থেকে নির্গত হাওয়ায় অনেক সময়ে ধুলোবালি কিংবা ব্যাকটেরিয়া মিশে যায়। এর ফলে সর্দি-কাশি কিংবা ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
> এসি ঘরে স্বাভাবিকের তুলনায় আর্দ্রতা কম থাকে। এর ফলে স্কিনের ড্রাইনেস বা শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়।
> এসি শুধু ত্বক নয়, চোখকেও শুষ্ক করে দেয়। এর ফলে চোখে চুলকানি, চোখ লাল হওয়া, চোখ থেকে জল ঝরা— প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়।
> এসি ঘরে থাকলে হাঁটু, কোমর, কনুই কিংবা ঘাড়ের কার্যকারিতাও প্রভাবিত হয়। সাধারণত এই সমস্ত জয়েন্টে এসি-র হাওয়ার প্রভাবে যন্ত্রণা দেখা দেয়।
> দীর্ঘ সময় ধরে এসি ঘরে থাকলে অ্যাজমা অর্থাৎ হাঁপানির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি আপনার ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার রোগ কিংবা ধুলোর অ্যালার্জি থেকে থাকে, তা হলে এসি ঘরে না থাকাই ভাল।
> এসি ঘরে দীর্ঘক্ষণ থাকলে ধমনী বা শিরা সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে দেহে রক্ত সঞ্চালন প্রভাবিত হয়।
এ তো গেল সমস্যা। কিন্তু গরম কালে এসি না চালিয়ে থাকাও তো সম্ভব নয়। আর অফিস যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়, তা হলে তো এসি বন্ধ করার কোন উপায়ও নেই। তা হলে কী ভাবে নিজেকে রক্ষা করা যাবে এসির কুপ্রভাব থেকে। ডাক্তার সিংহল জানাচ্ছেন, এর জন্য কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন—
> অফিসে যদি এসি থাকে, তা হলে এক-দু’ঘণ্টা বাদে বাদে এসি ঘর থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা সম্পন্ন কোনও জায়গায় পাঁচ-সাত মিনিট কাটিয়ে আসুন।
> বাড়িতে এসি থাকলে ঘণ্টাখানেক বাদে বাদে পাঁচ-সাত মিনিটের জন্য এসি অফ করে দিন।
> বাড়ি হোক বা অফিস- চেষ্টা করুন, এসি-র হাওয়ার এক্সপোজার যেন সরাসরি মাথায় না লাগে।
সূত্র: ইন্টারনেট