পাঁচ উপায়ে ঘুম হবে ভাল
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ২১:১৩
কাজের চাপ, দুশ্চিন্তাসহ নানা কারণে আজকাল অনেকেরই রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইড ইন্সটিটিউট অফ স্লিপ হেলথ (এআইএসএইচ) বলছে, ঘুম ঠিকমতো না হলে কিংবা ঘুমের সমস্যায় ভুগলে তা নানা ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন সারাদিন ঝিমুনিভাব থাকে, কাজে মনোযোগ দেয়া যায় না এবং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ।
রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের তারতম্যের কারণে মানুষ মোটা হয়ে যায়, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের আশঙ্কাও যায় বেড়ে।
তবে সুখবর হল, প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ছোট্ট কিছু পরিবর্তন আপনাকে এনে দিতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত ঘুম। এই পরিবর্তনকে বলা হয় স্লিপ হাইজিন।
১. পরিবেশ তৈরি করুন
এআইএসএইচ বলছে, শোবার ঘর যদি অন্ধকার, নিরিবিলি এবং ঠাণ্ডা হয় তাহলে তা নিশ্চিত করতে পারে শান্তির ঘুম। চারপাশের শব্দ তাড়াতে কানে ইয়ার প্লাগ পুরে দিন কিংবা চালু করে দিন হোয়াইট নয়েজ। শোবার ঘরে পর্দা রাখুন পুরু এবং গাঢ় রঙের কাপড়ের অথবা চোখে পড়ুন আই মাস্ক যা আপনাকে আলো থেকে দূরে রাখবে। রুমের তাপমাত্রা যেন আরামদায়ক ঠাণ্ডা হয়, এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। বিছানা এবং বালিশ আরাদামদায়ক কী না তা নিশ্চিত করুন।
২. ঠিক করুন দেহঘড়ি
ছোটবেলায় আমাদের সবারই সময়মতো ঘুমুতে যাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু বড় হতে হতে আমরা তা ভুলে যাই। অস্ট্রেলিয়ান স্লিপ হেলথ ফাউন্ডেশনের মতে, আমাদের শরীরের থাকে নিজস্ব ঘড়ি এবং হরমোন যা আমাদের ঘুম এবং জেগে থাকাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সবচেয়ে ভালভাবে কাজ করে যখন আমাদের ঘুমের রুটিনটা হয় নিয়মিত। স্লিপ হেলথ ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডেভিড হিলম্যান বললেন, "ঘুমুতে যাওয়ার ঠিক এক ঘণ্টা আগে থেকে আরামদায়ক ঘুমের জন্য কিছু নিয়ম পালন করুন। সেটা হতে পারে, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা, একটু বই পড়া কিংবা এক কাপ গরম দুধ খাওয়া। এরপর বাথরুম সেরে এসে শুয়ে পড়ুন।"
৩. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল বাদ দিন
রাতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা আপনার ঘুমের আরইএম চক্র নষ্ট করে ফেলতে পারে, যা হলো আপনার ঘুমের সবচেয়ে গভীরতম পর্যায়।
তিনি আরও বলেন, "নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ আপনার শরীরের স্বাভাবিক মেলানটোনিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।"
চা-কফিও কম খেতে হবে।
"খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত ক্যাফেইন নিলে তা আমাদের স্নায়ুকে সজাগ করে তোলে এবং ঘুম আসতে সমস্যা হয়।”
সকালে এক কাপ চা বা কফি চলতে পারে, কিন্তু ঘুমাতে যাওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে যদি আপনি ক্যাফেইন গ্রহণ করেন তা আপনার ঘুমের পরিমাণ ২ ঘণ্টা অব্দি কমিয়ে দিতে পারে। চা খেতে যদি ইচ্ছাই হয়, তাহলে বেছে নিন কোনো হারবাল চা।
৪. ব্যায়াম করুন
রাতে ভাল ঘুমের জন্য দিনের বেলায় জম্পেশ ব্যায়ামের চেয়ে ভাল ওষুধ আর কিছুই হতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অ্যারোবিক্স করলে ঘুম তো ভাল হবেই, বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকবে হৃদপিণ্ডের সুস্থতা এবং মন ভাল করার হরমোন এন্ডরফিনসের নিঃসরণ। তবে খেয়াল রাখবেন ঘুমের আগে আগে যেন ব্যায়াম করা না হয়, কারণ ব্যায়াম করার পর অনেকের স্নায়ু উত্তেজিত থাকে যা শান্ত হতে সময় লাগে।
৫. বাতি নিভিয়ে দিন
আমাদের টিভি দেখা, বই পড়া, কম্পিউটারে গেইম খেলা কিংবা বিছানায় শুয়েও ট্যাব বা স্মার্টফোন হাতে ফেইসবুকে ঢুঁ মারার অভ্যাসটা দিন দিন কিন্তু বেড়েই চলেছে। গবেষণা অনুসারে, এলইডি পর্দায় তৈরি যন্ত্রগুলো থেকে বের হয় স্বল্প তরঙ্গের নীল আলো, শক্তিশালী এই আলো আমাদের শরীরের ঘুমের হরমোন মেলানটোনিন নিঃসৃত হতে বাঁধা দেয়।
আমাদের করে তোলে সজাগ। এটি দিনের বেলায় ভাল হলেও রাতে আমাদের ঘুম হারাম করে ছাড়ে। নীল আলো আমাদের দেহঘড়ি কিংবা সারকেডিয়ান ক্লকের ছন্দপতন ঘটায়, ঘুমের রুটিনকে এলোমেলো করে ফেলে।
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল কম খেয়ে, ব্যায়াম করে, শান্তিপূর্ণ এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে, সর্বোপরি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে গেলে ঘুম সহজেই আপনার কাছে ধরা দেবে। আপনার ঘুম ভাল হোক!
সূত্র: মাইটনিক