স্তন ক্যানসারের অন্যতম কারণ ডিওডেরান্ট ও বক্ষবন্ধনী
প্রকাশ | ২২ জুন ২০১৬, ১৬:৫১
ব্রা বা বক্ষবন্ধনী পরলে কি স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়? কিংবা আন্ডারআর্মে নিয়মিত ডিওডেরান্ট ব্যবহার থেকে কি স্তন ক্যানসার হতে পারে? এমন আরও অনেক প্রশ্নই আসতে পারে মনে। সাম্প্রতিক নানা গবেষণা ও চিকিৎসকদের মতামতের ভিত্তিতে ‘অর্গানিক হেলথ ডটকম’ এক প্রতিবেদনে স্তন ক্যানসারের নানা প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে জানিয়েছে।
নিয়মিত ব্রা পরার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে অনেক গবেষণাই হয়েছে। তবে, নৃ-বিজ্ঞানী সিডনি সিঙ্গার ও সোমা গ্রিসমাইজারের করা একটা গবেষণার কথা এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। ‘ড্রেসড টু কিল: দ্য লিঙ্ক বিটউইন ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যান্ড ব্রাস’ শিরোনামে একটা বইও প্রকাশ করেছেন এ দুই গবেষক। চার হাজার নারীর ওপর পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কখনোই ব্রা পরেন না, এমন নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়মিত ব্রা পরেন এমন নারীদের তুলনায় অনেক কম।
বক্ষবন্ধনী ও স্তন ক্যানসার
অনেক চিকিৎসক ও গবেষকই একমত যে, শরীরে চেপে বসা খুব আঁটসাঁট ব্রা বা বক্ষবন্ধনী দেহকোষগুলোতে শ্বেত-রক্তকণিকাবাহী তরল বা লিম্ফের চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই সমস্যা থেকে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কেননা এমন হলে দেহ থেকে দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার প্রাত্যহিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এ ছাড়া দেহের লিম্ফ বা এই তরল সঞ্চারের পথ রুদ্ধ হলে অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট থেকে আসা অ্যালুমিনিয়াম দেহের ভেতরেই থেকে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
সিঙ্গার ও গ্রিসমাইজারের গবেষণার উল্লেখযোগ্য কিছু ফল
দিনে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ব্রা পরে থাকেন এমন নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৪ ভাগের ৩ ভাগ।
দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্রা পরেন কিন্তু ঘুমানের সময় পরেন না, এমন নারীদের ঝুঁকি ৭ ভাগের ১ ভাগ।
দিনে ১২ ঘণ্টার কম ব্রা পরে থাকেন এমন নারীদের ঝুঁকি ৫২ ভাগের ১ ভাগ।
খুব কমই ব্রা পরেন কিংবা একেবারেই পরেন না এমন নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৬৮ ভাগের ১ ভাগ।
অন্যান্য ঝুঁকি বা প্রভাবকগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে হয়তো এই গবেষণার ফল অনেকটাই পাল্টে যেত। কিন্তু অন্যান্য গবেষণায়ও ব্রা পরা এবং স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র নিয়ে এমন সব ফল পাওয়া গেছে, যা প্রকারান্তরে এই গবেষণার ফলকেই সমর্থন করে। উদাহরণ হিসেবে জাপানের একটা গবেষণার কথা বলা যেতে পারে। যাতে বলা হয়েছে, নিয়মিত ব্রা পরা দেহে মেলাটোনিনের পরিমাণ প্রায় ৬০ ভাগ কমিয়ে ফেলতে পারে। মেলাটোনিন হরমোনটি আমাদের প্রাত্যহিক ঘুম-জাগরণের দেহঘড়ির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। আর বহু গবেষণাতেই দেখা গেছে, মেলাটোনিন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
ডিওডেরান্টও কি স্তন ক্যানসারের সাথে সম্পৃক্ত?
শহর-নগরের বিপুলসংখ্যক নারী প্রায় প্রতিদিনই তাদের আন্ডারআর্মে ‘অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট’ ও ‘ডিওডেরান্ট’ বা গন্ধনাশক ব্যবহার করেন। এটা নিয়ে হয়তো কেউই মাথা ঘামান না। কিন্তু মাথা ঘামানো প্রয়োজন। কেউ যদি নিয়মিত এমন ডিওডেরান্ট ব্যবহার করেন এবং তাতে যদি অ্যালুমিনিয়াম থাকে, তাহলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
বাজারি গন্ধনাশক বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট আসলে ঘাম ঝরানোর লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে বা আটকে রাখার মধ্য দিয়ে কাজ করে। আর এ কাজে গন্ধনাশকগুলোর প্রধন উপাদান হলো অ্যালুমিনিয়াম। শরীর তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় লোপকূপ দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে দেয়। এই ঘাম ঝরানোর মধ্য দিয়ে আসলে শরীর নিজেকে দূষণমুক্ত করে। বাহুমূল শরীরকে দূষণমুক্ত করার, ঘাম ঝরানোর অন্যতম স্থান। কিন্তু বিষয়টা শুধু লোপমকূপ আটকে ঘাম বন্ধ করারই না। চিন্তা করতে হবে বাহুমূলে ব্যবহার করা ডিওডেরান্টের ধাতব উপাদান বা অ্যালুমিনিয়ামগুলো কোথায় যায়?
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। আর এটা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় শেভ করার পরপরই এমন ডিওডেরান্ট ব্যবহার করলে। এ ছাড়া আগে এমন একটা ধারণা ছিল যে, ডিওডেরান্ট ব্যবহার অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় ‘প্যারাবেনস’-এর সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। প্রসাধনী সামগ্রীগুলোর স্থায়িত্ব বাড়াতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে এই রাসায়নিকের বিপুল ব্যবহার রয়েছে। প্রায় সব ডিওডেরান্টেই প্যারাবেনসের পরিমাণ অনেক। বিষয়টা সাধারণ একটা উদাহরণ থেকেই বোঝা যেতে পারে। স্তন ক্যানসার থেকে মারা গেছেন এমন এক নারীর স্তনের টিস্যুতে বিপুল পরিমাণ প্যারাবেনসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে অটোপসি বা ময়নাতদন্ত থেকে।
আসলে ক্যানসার প্রতিরোধের লড়াইয়ে জেতার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ক্যানসারের কারণগুলো সম্পর্কে ভালো করে জানা। শুধু নিজে জানলেই হবে না। বিষয়গুলো জানাতে হবে চারপাশের মানুষজনকেও। আপনি নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন, আপনার কাছের মানুষদের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলুন। তাহলেই সামাজিক পরিসরে সচেতনতা বাড়বে। সবাই মিলে ক্যানসার প্রতিরোধের লড়াইটাও সহজ হবে।