ডায়াবেটিসে কিডনী ক্ষতি হয়
প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৩৩
ডায়াবেটিস থাকলে রক্তের সুগার মনিটর করা, তদারকি করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা যথেষ্ট নয়। জন হপকিনস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহ অধ্যাপক ডা. রিতা কল্যাণী বলেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সবাই এমনকি তাদের কিডনি সমস্যার লক্ষণ আছে কিনা তাও নজর করবেন। ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বর জটিলতা হলো কিডনি নিষ্ক্রিয়া এবং কিডনি ফেইলুর বা নিষ্ক্রিয়ার প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। জসিলন ডায়াবেটিক সেন্টারে নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে সহযোগী অধ্যাপক মেডিসিন ডা: রবার্ট স্ট্যানটন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত:যাদের ডায়াবেটিস তারা অনেক সময় বুঝতে পারেনা যে তাদের রয়েছে কিডনি রোগ’। কিডনি নিষ্ক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়না।
তবে সুসংবাদও আছে। সহজ টেস্ট করে কিডনির কাজকর্ম পরীক্ষা করা যায় এবং আগাম কিডনি রোগ চিহ্নিতও করা সম্ভব। সূচনায় রোগের চিকিত্সায় বড় রকমের তারতম্য ঘটানো যায়। ওষুধপত্র, খাদ্যবিধি, রক্তগ্লুকোজের সুনিয়ন্ত্রণ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে পারে বা অগ্রগতি ধীর করে দিতে পারে। মূল চাবিকাঠি হলো আগাম রোগ নির্ণয় এবং অবিলম্বে চিকিত্সা।
ডায়াবেটিসে কিভাবে কিডনির ক্ষতি হয়
কিডনি পরিশ্রুত করে রক্ত। বর্জ বেরিয়ে যায় মূত্রের মাধ্যমে আর পরিশ্রুত রক্ত ফিরে যায় শরীরে। ডায়াবেটিক রোগীদের কিডনির ক্ষতি হতে পারে তখন, যখন রক্তকে পরিশ্রুত করতে পারেনা ঠিকমত। সামান্য পরিমাণ এলবুমিন মূত্র দিয়ে বেরিয়ে যায়। উঠে যায় রক্তচাপ কিডনির উপর আরো চাপ পড়ে। আরও বেশি প্রোটিন বেরিয়ে যায় প্রস্রাবে। এসব পরিবর্তন হতে থাকলে কিডনির রক্ত পরিশ্রুত করার ক্ষমতা আরও হ্রাস পায়, রক্তে জমতে থাকে বর্জ্য পদার্থ। রক্তে গ্লুকোজের উচু মান ডায়াবেটিসের সূচক বটে- কালক্রমে অনেক ক্ষতি করে কিডনি কোষদের। সেন্টলুই ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর অব মেডিসিন ও এনডোক্রিনোলজিস্ট ডা: জেনেট বি ম্যাকগিল বলেন, ডায়াবেটিস, কিডনি ক্ষতির অন্যান্য কারণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। ম্যাকগিল বলেন, ‘টাইপ ১ ডায়াবেটিসে কিডনি ক্ষতি হলো বহুলাংশে রক্তে গ্লুকোজের উঁচুমানের ফলশ্রুতি।’ তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে কিডনি ক্ষতির পেছনে থাকতে পারে নানাবিধ কারণ। উচুমান গ্লুকোজ, উচ্চরক্তচাপ, প্রদাহ, বয়স এবং জীনগতি এদের মধ্যে পরস্পর আন্ত:ক্রিয়া বড় কারণ হতে পারে। চিকিত্সা না হলে ক্ষতি শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে, পরিণতিতে কিডনি হতে পারে নিষ্ক্রিয়। প্রান্তিক পর্যায়ে এলে শেষ চিকিত্সা বিকল্প ডায়ালাইসিস নয়ত ট্রান্সপ্লান্ট।
কিডনি ক্ষতির লক্ষণ বা উপসর্গ
কিডনির তাত্পর্যপূর্ণ ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কিডনি সমস্যার স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়না। ফেনিল সূত্র, ওজন বৃদ্ধি, শরীরে পানি ধারন, ক্ষুধামান্দ্য, শরীর খারাপ লাগা। এরকম হলে ডাক্তার দর্শণ অবশ্য। আগাম সময়, কিডনি ক্ষতিতে তেমন উপসর্গ নেই। ডাক্তারের কাছে রক্ত ও প্রস্রাবের বিশেষ পরীক্ষা করে তবে জানতে হয়। রক্তের গ্লুকোজ মান পরীক্ষায় কিডনির কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। প্রচলিত মূত্র পরীক্ষা এত সংবেদনশীল নাও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং কিডনি ক্ষতির ঝুকি আছে এদের তিনটি টেস্ট করা প্রয়োজন।
রক্তচাপ মনিটরিং
উচ্চরক্তচাপ হতে পারে কিডনি সমস্যার একটি লক্ষণ। স্ট্যানটন বলেন, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ যাদের এদের রক্তচাপ সুনিয়ন্ত্রণ করা উচিত। লক্ষ হওয়া উচিত রক্তচাপ ১৩০/৮০ এর নিচে রাখা। প্রস্রাবে প্রোটিন, ক্রিয়েটিনিন ও এলবুমিন পরীক্ষা:কিডনি ক্ষতি হতে থাকলে সামান্য পরিমাণ প্রোটিন প্রস্রাবে যেতে থাকে। ল্যাবরেটরীতে টেস্ট করা যেতে পারে। ২৪ ঘন্টার প্রস্রাব সংগ্রহ এখন লাগেনা। একটি একক নমুনাই যথেষ্ট।
অনুমিত গ্লুমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (ই.জি.এফ.আর) eGFR: রক্তের ক্রিয়েটিনিন মান থেকে সূত্র অনুযায়ী গণনা করলে পাওয়া যায় ইজিএফআর। কিডনি রক্তকে কেমন পরিশ্রুত করছে, তা বোঝা যায়।
ডায়াবেটিস ও কিডনি ক্ষতির চিকিৎসা
জীবন যাপনে পরিবর্তন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া, ব্যায়াম করা, রক্ত গ্লুকোজ মানের উপর নাটকীয় প্রভাব ফেলে। কারো প্রয়োজন লো-প্রোটিন ডায়েট। ধূমপান করে থাকলে তত্ক্ষণাত্ ছেড়ে দেওয়া। লিপিড নিয়ন্ত্রণ কোলেস্টেরোল ও ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণ কিডনি কাজ কর্মের উপর সরাসরি প্রভাব না থাকলেও এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
হোম মনিটরিং
ঘরে রক্তের গ্লুকোজ চেক করা ছাড়াও রক্তচাপ ও মনিটরিং চাই।
ওষুধ পত্র
এসিই ইনহিবিটার ওষুধ এবং এনজিওটেনিসন রিসেপ্টার ব্লকার উচ্চরক্তচাপ রোগীদের কিডনি ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। কিডনি নিষ্ক্রিয় হলে ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্ট। কিডনি নিষ্ক্রয় হলো ডায়াবেটিসের গুরুত্বর ঝুঁকি, তবে বেশিরভাগ ডায়াবেটিক রোগী নিষ্ক্রিয়ার পথে যায়না। সুচিকিত্সা হলে গুরুতর কিডনি রোগের রোগীদেরও ডায়ালাইসিস দেরি হতে পারে অনেক দিন। স্যান্টন বলেন, ডায়াবেটিক রোগী বা প্রিডায়াবেটিক রোগী কিডনি সমস্যার ঝুঁক ভেবে সংকিত হওয়া উচিত নয়। স্যান্টন বলেন, ডাক্তারের পরামর্শ না নেয়া হলো বড় ভুল। টেস্টগুলো করে ভালো ফল পেলে এবং কিডনি সমস্যার লক্ষণ না পেলে মনে শান্তি হলো। কোনও লক্ষণ পেলেও অবিলম্বে চাই চিকিৎসার শুরু। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের আগ্রাসী চিকিৎসা বড় রকমের পার্থক্য ঘটাতে পারে। তবে চিকিৎসা নেবার আগে জানা চাই যে সমস্যাটি আছে।
লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা
সূত্র: ইত্তেফাক