শারীরিক তথ্যবিষয়ে নারীর আস্থা ডিভাইসে

প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৬, ১৯:১১ | আপডেট: ২৮ মে ২০১৬, ১৯:৩৩

অনলাইন ডেস্ক

৭০-এর দশকে মার্থা ম্যাকক্লিলনটক নামের ওয়েলেসলি কলেজের সাইকোলজির একজন শিক্ষার্থী একটি বিষয় লক্ষ্য করেন- একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটায়, এমন নারীদের একই সঙ্গে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার প্রবণতা থাকে। তিনি ধারণা করেন, ঋতুস্রাব চলছে এমন শরীর একে অন্যের ওপর কোনভাবে হয়তো প্রভাব ফেলে। কিন্তু এটা শুধুই একটি অনুমান ছিল।
 
মার্থা অবশ্য একটা ছোটখাটো একটি সমীক্ষা চালান। তিনি তার ১৩৫ জন সহপাঠীকে তাদের ঋতুচক্রের হিসাব রাখতে বলেন। বছরে তিনবার তিনি তাদেরকে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার সময় এবং তারা কাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিলো ম্যাকক্ললিনটক-এর ধারণা ঠিক। কারণ দেখা যায়, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ঋতুচক্র একই সময়ে শুরু হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
 
ঋতুচক্ররের মিলে যাওয়ার এই ঘটনাটিকে ‘মাকক্লিনটক ইফেক্ট’ বলে ডাকা হয়। ম্যাকক্লিনটকের সেই সমীক্ষার ফলাফল অমীমাংসিত থাকলেও তার থেকে নারীস্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষের মধ্যে, এমনকি নারীদের মধ্যেও যে অস্পষ্টতা, লুকিয়ে রাখার প্রবণতা কিংবা নিজের শরীর সম্পর্কে অন্যকে জানানোর আড়ষ্টতা সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আর মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতে, 'অত্যন্ত ভীতিকর' বিষয় হচ্ছে, তার প্রায় ৫০ বছর পরে এসেও এটা একটুও কমেনি। এখনো নারীরা বুঝতে পারছেননা যে কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা নয়। নারী-শরীরের কার্যক্রম নিয়ে মানুষ এখনো অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং অজ্ঞ।
 
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন একটি দিক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ, বিশেষত নারীরা এখন তাদের মোবাইল ফোনে নিজেদের স্বাস্থ্য এবং স্বভাব সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করছে। মোবাইল ফোন যোগাযোগ করার যন্ত্রের পাশাপাশি দিনলিপি, ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তির স্থান এবং একান্তই গোপন তথ্যের সংগ্রহশালা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণেই গবেষকরা প্রতিনিয়ত জমাতে থাকা এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার নিয়ে কাজ করতে প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তারা আশা করছেন এর মধ্যে থেকে হয়তো ‘ম্যাকক্লিনটক ইফেক্ট’-এর মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানের অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া সম্ভব হবে।
 
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর সহকারী অধ্যাপক জেসমিন ম্যাকডোনাল্ড এবং সহকারী গবেষক লরেন হওটন কিশোরী মেয়েদের বয়ঃসন্ধির নমুনা নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা বছরেরও বেশি সময় জুড়ে এই কাজ করছেন এবং তাদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারা এতদিন যাবৎ ক্যালেন্ডার এবং কাগজের প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু তারা লক্ষ্য করেন, এ পদ্ধতিতে কিশোরী মেয়েরা সময়, তারিখ ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণে বেশ অনিশ্চয়তায় ভুগছে। গবেষকগণ হাইস্কুলের একজন ইন্টার্নকে তাদের ঋতুচক্রের হিসাব রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে স্মার্টফোন অ্যাপের সম্পর্কে জানা যায়। তিনি ‘ক্লু’ নামের একটি অ্যাপের সন্ধান দেন।
 
গবেষকরা মনে করেন, যখন এরকম অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে, তখন কাগজের বদলে অ্যাপ ব্যবহার করা অবশ্যই অধিক যুক্তিসঙ্গত। কাগজে তথ্য সংরক্ষণ করা অনেকটা হোমওয়ার্কের মতো। এটি কখনোই সময়মতো ঠিকভাবে করা হয় না বলেও মত দিয়েছেন তারা।