হট ফ্ল্যাশ- নারীদের পীড়াদায়ক সমস্যা

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:২৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

নারীদের জীবনে পিরিয়ড বা ঋতুচক্র একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যখন এই ঋতুচক্র শেষ হয়ে আসে সেই সময় কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। তারমধ্যে সবচেয়ে অসুবিধাজনক উপসর্গটি হচ্ছে হট ফ্ল্যাস।

হট ফ্ল্যাস বলতে কি বুঝায়?

মেনোপজাল এবং পেরিমেনোপজাল সময় নারীরা মুখ, ঘাড়া, মাথায় হঠাৎ খুব গরম ভাব এবং জ্বালা অনুভব করেন। মুখের চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে, তার সাথে অনেক ঘাম হওয়া। হাত ও পায়ের তালুতেও অনেক সময় জ্বালা অনুভূত হয়। এটি মূলত কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে। এই সমস্যাগুলোই হট ফ্ল্যাস নামে পরিচিত।

হট ফ্ল্যাসের হওয়ার কারণ

মেনোপজের সময় নারীদের শরীরে যে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে তা-ই হট ফ্ল্যাসের মূল কারণ। এই সময় শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যহত হয়। হঠাৎ হঠাৎ গরম ভাব এবং জ্বালা ভাব দেখা দেয়। হট ফ্ল্যাস হওয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কফি পান, মদ্যপান, মাল-মশলাযুক্ত খাবার, ধুমপান এবং খুব টাইট জামা-কাপড় পরিধান।

হট ফ্ল্যাস প্রতিরোধ ও প্রতিকার

হরমোন (ইস্ট্রোজেন) চিকিৎসাই হট ফ্ল্যাশের সর্বোত্তম চিকি ৎসা। নানা গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল প্রচারিত ও গৃহীত। শতকরা ৯০ ভাগ নারী এই চিকি ৎসার মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে এমন দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

কিছু রোগী (যেমন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত) এই চিকিৎসা নিতে পারেন না। তাদের জন্য বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে নানা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। ফাইটোইসট্রোজেনসমৃদ্ধ খাবারদাবার, ক্যাপসুল, হার্বাল, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি থেকে শুরু করে যোগব্যায়াম, রেইকি, আকুপাংচার, সাইকোথেরাপি পর্যন্ত বিভিন্ন পদ্ধতির উল্লেখ ও ব্যবহার আছে। তবে এসব বিকল্প চিকিৎসার নিরাপদ ও নিশ্চিত সুফল পেতে হলে আরও বিশদ গবেষণা হওয়া দরকার।

মাইগ্রেন ও উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে ব্যবহৃত ওষুধ ক্লোনিডিন অনেক সময় যেসব রোগীর হরমোন নেওয়া কারণ, তাদের বেলায় দেওয়া হয়। সম্প্রতি কিছু সেরোটনিন ইনহিবিটর এবং মৃগী রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত গাবাপেনটিন হট ফ্ল্যাশ দূর করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

৫০ বছর বয়সে একজন সফল নারী যখন পেশাজীবনের শীর্ষে, তখন হট ফ্ল্যাশের মতো যন্ত্রণাদায়ক ভোগান্তি তাঁর আত্মবিশ্বাস ও কর্মক্ষমতা নষ্ট করে তাঁকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। এটি যেহেতু ধীরে ধীরে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায় এবং মারাত্মক কোনো ব্যাধি নয়, তাই হয়তো এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণামূলক কাজ আজও হয়নি। এর সুচিকিৎসার জন্য আমাদের এই যন্ত্রণাদায়ক সূচকটির কারণ খুঁজে বের করা অবশ্যই প্রয়োজন। তা না হলে মেনোপজের এই অত্যাশ্চর্য উপসর্গটি আরও বহুদিন পর্যন্ত রহস্যাবৃতই থেকে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত