কাইমেরিজম: একই দেহে যখন বাসা বাঁধে দুইজন
প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:০৯
কেমন হবে যদি আপনি জানতে পারেন, আপনার শরীরে রয়েছে আরেকজনের অস্তিত্ব। কোন কারণে যদি ডিএন এ টেস্ট করান আর জানতে পারেন, আরেকজনের ডিএনএ সাথে নিয়ে আপনি পৃথিবীতে এসেছেন, যার জন্মই হয়নি। শরীরে দুই সেট ডিএনএ এর এই উপস্থিতিকে বলা হয় কাইমেরিজম। সুতরাং একই মানুষের দেহের রঙ দুটি অথবা দুটি ভিন্ন চোখের রঙের কাউকে দেখলে চমকে যাওয়ার কিছু নেই।
কাইমেরিজম শব্দটি এসেছে গ্রীক মিথোলজি কাইমেরা থেকে। গ্রীক মিথোলজিতে এমন এক দৈত্যের কথা উল্লেখ রয়েছে, যার দেহের একটি মাথা সিংহ আর আরেকটি মাথা ও শরীর ছাগলের ন্যায়। আর লেজটি সাপের মত। অর্থাৎ একই দেহে বিভিন্ন প্রাণীর বসবাস। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, কাইমেরিজম শব্দটি এমন এক অবস্থাকে বুঝায় যখন একটি অঙ্গের কোষগুলো দুই বা ততোধিক জাইগোট থেকে আসে।
বিশেষজ্ঞরা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নন, ঠিক কতজন কাইমেরিজম ব্যক্তি পৃথিবীতে রয়েছেন। তবে কাইমেরিজম মানব দেহে সত্যিকার অর্থেই বিরল। মেডিকেল শাস্ত্র সর্বশেষ ১০০ জন ব্যাক্তির রেকর্ড করেছেন, যদিও তা নিয়ে ভিন্ন মতামত রয়েছেন। কাইমেরিজম যে শুধু মানুষের দেহে হবে তা নয়, প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহেও কাইমেরিজমের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
১৯৯৬ সালে আমেরিকান জার্নাল অব মেডিকেল জেনেটিক্স থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে আমস্টাডার্মের একদল গবেষক জানান, রক্তের গ্রুপের উপর ভিত্তি করে কাইমেরিজমকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, আর্টিফিসেল, ডিসপেরিমিক এবং টুইন কাইমেরিজম।
আর্টিফিসেল কাইমেরিজম সাধারণত স্টেম সেল রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অথবা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
ডিসপেরিমিক কাইমেরিজম সাধারণত প্রাণীকূলে দেখা যায়। বিড়াল, ইঁদুর, ছাগল এবং খুবই বিরল অবস্থায় মানুষের দেহে এই কাইমেরিজমের দেখা মেলে। এক্ষেত্রে মাতৃকোষের দুটি ডিম্বানু একটি স্পার্ম দ্বারা একটি শরীর গঠন করে। কখনো বা দুটি ডিম্বানু দুটি স্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয়ে একটি শরীর গঠন করে। যেহেতু চারটি জনন কোষ এ প্রক্রিয়ায় কাজ করে, তাই একে টেট্রাগ্যামেটিক কাইমেরিজমও বলা হয়। এক্ষেত্রে কাইমেরিজমটি রক্তে প্রকাশিত না হয়ে বরং অনেকটা শারিরীক পর্যায়ে দেখা যায়। শরীরের বর্ণ দুটি অথবা ফিব্রোব্লাস্ট কোষে দুটি ভিন্ন লিনিয়েজ এতে দেখা যায়।
টুইন কাইমেরিজম সাধারণত গবাদি পশুর ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে । তবে ব্যতিক্রম হিসেবে মানুষের দেহে হয়ে থাকে। অনেক সময় মাতৃগর্ভে দুটি ভ্রুন নিষিক্ত হলেও একটি ভ্রুন অপরটিকে শোষণ করে ফেলে কিন্তু দুই সেট ডিএনএ একটি দেহে থাকে।
(চলবে)
ডিএনএ: শরীরের বংশগতির একক হচ্ছে ডিএনএ, যেখানে দেহের সকল তথ্য লুকায়িত থাকে।
স্টেম সেল (স্টেম কোষ): স্টেম সেল হচ্ছে শরীরের এমন কিছু কোষ যারা অন্য কোষ থেকে পৃথক হয় এবং তারা বিশেষ ধরণের কোষ শরীরে তৈরি করতে পারে। দুর্ঘটনায় বা কোন রোগে কোন কোষের ক্ষতিসাধণ হলে তা রিপ্লেস করার ক্ষমতা রাখে স্টেম সেল।
ফিব্রোব্লাস্ট: শরীরের গাঠনিক টিস্যুর অন্যতম উপাদান ফিব্রোব্লাস্ট, যা মূলত ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।
লিনিয়েজ: সেল লিনিয়েজ বলতে মূলত ভ্রুন থেকে অর্গানে রুপান্তরের স্টেজকে বুঝায়।