কিভাবে মানুষে ও প্রাণিতে জলাতঙ্ক হয়?

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:১৩ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৫

কোন প্রকারে সংক্রমিত প্রাণির লালা মানব শরীরে প্রবেশ করলে মানুষে জলাতঙ্ক হবে। প্রাণির কামড়, আঁচড় বা লেহনে সংক্রমিত প্রাণির লালা মানব শরীরে প্রবেশ করে এবং জলাতঙ্ক ঘটায়। সংক্রমিত প্রাণির লালা কারো চোখে প্রবেশ করেও জলাতঙ্ক হতে পারে।

খাবারের মাধ্যমে কি জলাতঙ্ক হতে পারে?

আজ পর্যন্ত সংক্রমিত প্রাণির কাঁচা দুধ বা দুধজাত পানে জলাতঙ্ক হয়েছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে এ রকম সঞ্চারণ সম্ভব। এজন্য আক্রান্ত প্রাণির কাঁচা দুধ বা দুধজাত পান জলাতঙ্ক সঞ্চারণের ঝুঁকি হিসেবে এবং আক্রান্ত প্রাণির কাঁচা দুধ থেকে প্রস্তুতকৃত ও উৎপাদিত দুধজাত উভয়ই জলাতঙ্ক সঞ্চারনের উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বন্যপ্রাণী থেকে প্রস্তুতকৃত মাংস গ্রহণও জলাতঙ্ক সঞ্চারণের উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

আক্রান্ত প্রাণির কামড়, আঁচড় বা লেহনের দিন থেকে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশের দিন পর্যন্ত সময়সীমাকে সংক্রমণ সময় বলা হয়। মানুষে সাধারণভাবে এই সময়সীমা ১-৩ মাস। তবে এই সময়সীমা এক সপ্তাহ’র কম কিংবা এক বছরের বেশিও হতে পারে। সাধারণভাবে কুকুর-বিড়ালে এই সময়সীমা ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস। তবে এই সময়সীমা ১০ দিনের মধ্যে কিংবা ৬ মাসের বেশি হতে পারে। গরু জাতীয় সমূহ জাবর কাটা প্রাণিতে সাধারণভাবে এই সময়সীমা ২৫ দিন থেকে ৫ মাস। 

জলাতঙ্কের প্রাথমিক দুটি লক্ষণ হচ্ছে জ্বর ও আক্রান্ত স্থানে অস্বাভাবিক ব্যথা, তীব্র জ্বালাপোড়া, খোঁচানি ও অস্থিরতা। আক্রান্তের স্থান ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে জলাতঙ্কের লক্ষণ আগ্রাসী ও নিস্তেজ- এই দু’রকমের হয়ে থাকে। 

জলাতঙ্কের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

• মাথাব্যথা 
• লালা নিঃসরণ 
• অতিরিক্ত ঘামানো
• আলো ভীতি
• পানি ভীতি
• ক্রদ্ধ আচরণ
• খিটখিটে মেজাজ
• স্মৃতিভ্রম
• কামড় বা আঁচড়ের দাগ থেকে ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানের মাংস পক্ষাঘাতগ্রস্থ হওয়া 
• কোমা
• মৃত্যু

কোন ব্যক্তিতে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে কি করতে হবে?

জেনে রাখতে হবে জলাতঙ্ক রোগে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। তাই কোন ব্যক্তিতে এই রোগের লক্ষণ দেখা যাওয়া মাত্রই অবিলম্বে তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ভোগান্তি লাঘব হবে এবং তার পারিবারিক দুশ্চিন্তার চাপ কমবে।

কোন প্রাণিতে জলাতঙ্ক কিভাবে বুঝা যাবে?

জলাতঙ্ক হলে মানুষের মত প্রাণিতেও আচরণে পরিবর্তন আসবে। শান্ত প্রকৃতির প্রাণি ক্রুদ্ধ হবে কিংবা বেশ সক্রিয় প্রকৃতির প্রাণি চুপচাপ থাকবে। মানুষের মত প্রাণিতেও জলাতঙ্কের প্রাথমিক দুটি লক্ষণ হচ্ছে জ্বর ও আক্রান্ত স্থানে অস্বাভাবিক ব্যথা, তীব্র জ্বালাপোড়া, খোঁচানি ও অস্থিরতা।

প্রাণিতে জলাতঙ্কের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

• আক্রান্ত প্রাণি বিভ্রান্ত, অস্থির ও আক্রমণাত্মক দেখায়
• অদ্ভুত আচরণ প্রকাশ যেমন বায়ু কামড়ানোর চেষ্টা করা, চক্রাকার বাঁক সৃষ্টি করা বা অপরিচিতদের দেখলে অস্বাভাবিক ভীতসন্ত্রস্থ হওয়া 
• কাছাকাছি যে কোন বস্তু আঘাত বা কামড়ানোর চেষ্টা করা
• কণ্ঠ পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়
• অত্যধিক ঢলে পড়বে 
• মাঝেমধ্যে অদ্ভুত জিনিস যেমন পাথর, ময়লা বা কাঠ খায়
• ক্ষুধামন্দা 
• আংশিক বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া
• অন্যান্য অনেক আচরণে পরিবর্তন

প্রাথমিক লক্ষণ দেখে প্রাণিতে (কুকুরে) জলাতঙ্ক হয়েছে বুঝা অনেক কঠিন ব্যাপার। তাই কুকুর দেখে আতংক হওয়া এবং কুকুরের কোন ক্ষতি করা একেবারেই অনুচিত।

কোন প্রাণিতে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে ঐ প্রাণি থেকে মানুষকে যথাসম্ভব দূরে থাকার পরামর্শ দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন স্থানীয় ভেটেরিনারি কর্মকর্তা, স্থানীয় নেতা বা পুলিশকে বিষয়টি অবশ্যই অবহিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা যদি না পাওয়া যায়; তখন একটি নিরাপদ পরিবেশে পর্যাপ্ত পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রেখে সন্দেহজনক প্রাণিকে টানা ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পর্যবেক্ষণ সময় শেষে যদি ঐ প্রাণি দিব্যি বেঁচে থাকে; তবে ঐ প্রাণিতে জলাতঙ্ক হয় নি বলে ধরে নেওয়া যাবে। 

লেখক: রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, র‍্যাবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশন- বাংলাদেশ