শিশুর মিথ্যেকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না তো?
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৭, ০১:৪৭
মুখে চকোলেটের দাগ নিয়ে যখন শিশুরা মায়ের ভয়ে বলে চকোলেট খাইনি, তখন ওদের আরো কিউট লাগে। শিশুদের এমন ছোট ছোট মিথ্যা বলা দারুণ মজার লাগে। কিন্তু ক্রমেই তা যখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়, তখন সত্যিই চিন্তার বিষয়।
এমনই চিন্তিত এক মা আশা। তিনি তার শিশুর এমনই এক ঘটনার কথা বললেন। ছোট্ট মেয়েটির নাম নিতিয়া। স্কুল শেষে মাকে গল্প শোনাতো স্কুলে সে কিভাবে লক্ষ্মী মেয়ের মতো টিচারদের সব প্রশ্নের জবাব দেয়। টিচাররা তাকে কতটা আদর করে তাও জানাতো মায়ের কাছে। কিন্তু কয়েক মাস পরই গল্প উল্টে গেলো। যে টিচাররা তাকে দারুণ আদর করতেন, তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জানাতে লাগলো মায়ের কাছে।
একদিন অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সভায় এ প্রসঙ্গ তুললেন আশা। তুলেই তিনি হতভম্ব। তেমন কিছুই ঘটেনি যে অভিযোগ মেয়ে তুলেছে। বাড়িতে নিতিয়াকে নিয়ে বাবা-মা বসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, কেন সে মিথ্যা বলেছিল? এতে সে নানা ধরনের এলোমেলো জবাব দেয়। তবে এর আসল কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
শিশুরা সব সময় একটা কল্পনার মধ্যে থাকে। বাস্তবিক কাজে মন দিলেও তার মাথায় কাল্পনিক চেতনা কাজ করতে থাকে। সে প্রায়ই সেই রাজ্যে হারিয়ে যায়। তখন সত্য-মিথ্যা আলাদা করার সুযোগ থাকে না।
সব শিশুই বিশেষ কারণবশত মিথ্যা কথা বলে। কারণভেদে মিথ্যা বলার প্রবণতা প্রবল হয়। এ সংক্রান্ত কয়েকটি পয়েন্ট জেনে নিন।
১. সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য তারা করতে পারে না। এমনকি মিথ্যা বলার সময়ও এ বিষয়টি শিশুদের মাথায় কাজ নাও করতে পরে। এ ধরনের মিথ্যাচার ক্ষতিকর নয়। তবে স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকে বিষয়টি লক্ষ্য করতে হবে।
২. স্কুলে গেলে অনেক শিশুদের মাঝে তাদের মিথ্যা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। নতুন মুখদের মাঝে নিজের ভুল লুকাতে তারা মিথ্যা আশ্রয় নেয়। ভুল শিকার করলে আবারো কি না হয়, এই ভয়ে তারা মিথ্যা বলতেই থাকে।
৩. শিশুদের যারা অবহেলিত হচ্ছে বলে মনে করছে, তারা মিথ্যার মাধ্যমে অন্যদের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভালোবাসার মাধ্যমে এ অভ্যাস থেকে বের করে আনা যায় তাদের।
৪. আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং অনিরাপদ বোধ করলেও তারা মিথ্যা বলে।
৫. শিশুরা বাবা-মায়ের মিথ্যা বলা থেকেও এ শিক্ষা লাভ করতে পারে।
৬. স্কুলে যাওয়ার আগেই শিশুদের সত্য এবং মিথ্যা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে বাবা-মাকে। তখন মিথ্যা বললেও এ থেকে সাবধান থাকার চেষ্টা করবে সে।
৭. রূপকথার গল্প অভিভাবকদের জন্যে সহায়ক হতে পারে। মিথ্যা বললে কি কি হয় এমন বহু গল্প প্রচলিত রয়েছে। এসব শিক্ষণীয় বই।
৮. অনেক বড় মিথ্যা অভিভাবকেরা ভুল করে হেসেই উড়িয়ে দেন। তখন শিশুর কোনো সংকোচ থাকে না।
৯. মিথ্যা বললে তাকে আদর করে কাছে ডেকে মিথ্যা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করুন।
১০. সত্য বলা সহ যেকোনো ভালো কাজের জন্যে উপহার দিন।
১১. সবার আগে খেয়াল করে দেখবেন, আপনাকে দেখে সে মিথ্যা বলার অভ্যাসটা রপ্ত করছে কিনা। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকের আগে সাবধান হতে হবে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া