কম বয়সেও হতে পারে স্ট্রোক
প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২৯
অনেকের ধারণা স্ট্রোক শুধু বয়স্কদের হয়। এই ধারণা ভুল। স্ট্রোক বয়স্কদের বেশী হয়। তবে বর্তমানে কম বয়সীদেরও অনেক স্ট্রোক হচ্ছে। প্রতি বছর স্ট্রোকের কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অনেকে অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারায়। অথচ দেখা গেছে স্ট্রোক অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক হয়ে গেলে সে ব্যক্তির এবং পরিবারের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। তাই প্রতিরোধের দিকে সবার নজর দেয়া উচিত। অল্প বয়সে স্ট্রোক হলে সমস্যা বেশি। রোগীর যে সময় কর্মক্ষম থাকার সময় সেই সময় কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং সব সময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়।
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে বা হঠাত্ রক্ত বের হয়ে কোন এলাকা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার নাম হলো স্ট্রোক। ফলে শরীরের এক দিক বা কোন অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কথা জড়িয়ে যেতে পারে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্ট্রোক হলে খাবার গ্রহণে অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় প্রস্রাব ও পায়খানার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তবে সবার একই লক্ষণ থাকবে তা নয়। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক লক্ষণ থাকে। ব্রেনের কোন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে সমস্যা দেখা দেয়।
অল্প বয়সে স্ট্রোকের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বয়স্কদের স্ট্রোকের কারণ আর অল্প বয়সে স্ট্রোকের কারণের মধ্যে পার্থক্য আছে। অল্প বয়সে যে সব কারণে স্ট্রোক হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-
১. বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ। অল্প বয়সে স্ট্রোকের ২৫ শতাংশের কারণ নানা ধরনের হৃদরোগ।
২. জন্মগত ত্রুটির জন্য মস্তিষ্কের রক্তনালী হঠাত্ ছিড়ে যায়। এই ধরণের ঘটনা অল্প বয়সেই সাধারণত: বেশি ঘটে।
৩. বিভিন্ন ধরণের ভাস্কুলাইটিস। কম বয়সে এই সব সমস্যা বেশি হয়।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি স্ট্রোকের অন্যতম একটি কারণ। ৪৫ বছর পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ব্যবহার করতে হয়না। অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।
৫. যারা নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন, তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক। অল্প বয়সীদের মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা বেশি।
৬. কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।
৭. বর্তমানে ফাস্টফুড গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে রক্তে চর্বি। রক্তে চর্বির আধিক্যও অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৮. বর্তমানে কায়িক পরিশ্রমে প্রতি প্রায় সবারই অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে স্থূলতা। গবেষণায় দেখা গেছে স্থূলদের স্ট্রোক বেশি হচ্ছে।
৯. মানসিক চাপ, মাইগ্রেন অল্প বয়সীদের বেশি হয়। এসব স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অল্প বয়সে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্যে সচেতন হতে হবে। সাবধান হয়ে চললে অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। আবার নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকিও অনেক কমে আসে। পরিশ্রম না করলে বা বেশি তেল-চর্বি খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ে। ফলে ওজন বাড়ে। এর ফলে স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক আসে। বর্তমানে তরুণদের ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ অনেক কম। তরুণদের এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শাক সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, চর্বি নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে স্ট্রোকও কম হবে। খাবারে কাচা লবণ কম খেতে হবে। লবণ কম খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকের ঝুকিও কমে আসে। হার্টের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ গ্রহণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। তাই খাবার গ্রহণে নিয়মানুবর্তীতা ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে এবং যে সব কারণে স্ট্রোক হয় সে কারণগুলো এড়িয়ে চললেই স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক: মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল