চিত্রনিভা চৌধুরী বাংলার প্রথম নারী চিত্রশিল্পী

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৪২

জাগরণীয়া ডেস্ক

বিংশ শতাব্দীর একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী চিত্রনিভা চৌধুরী, যিনি বঙ্গীয় স্কুল অব আর্টের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী চিত্রশিল্পী। তার হাজারেরও বেশি শিল্পকর্ম রয়েছে যার মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ, স্থিরচিত্র, আলংকারিক শিল্প এবং প্রতিকৃতি রয়েছে। চিত্রনিভা চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জের সারকুমারী দেবী এবং ডা. ভগবান চন্দ্র বোসের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সেই তার পরিবার প্রথমে গোমোহে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুরে স্থানান্তরিত হয়।

চিত্রনিভা চৌধুরীর জন্ম মুর্শিদাবাদে ২৭ শে নভেম্বর ১৯১৩ সালে এবং পারিবারিক নাম নিভাননী। ১৯২৭ সালে নোয়াখালির লামচর গ্রামের জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র চৌধুরীর মেজোছেলে নিরঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং শ্বশুরবাড়ির উৎসাহে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হয়ে নন্দলাল বসুর কাছে ছবি আঁকা ও সঙ্গীত ভবনে গিয়ে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে এস্রাজ, সেতার এবং বীণা বাজাতেও শেখেন। Cover chitroniva সামগ্রিক লেখাপড়ার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কবির সাহচর্যে চিত্রনিভা অজস্র ছবি এঁকেছিলেন।

ছবি আঁকছেন চিত্রনিভা চৌধুরী

একদিন নিভাননীর আঁকা অনেকগুলি ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে কবি তাঁর নূতন নামকরণ করেন চিত্রনিভা। সেই থেকে রবীন্দ্রনাথ নিভাননীকে চিত্রনিভা বলে ডাকতেন এবং প্রায়ই রসিকতা করে বলতেন ‘তোমার নামকরণ করলুম, এখন বেশ বেশ ঘটা করে আমাদের খাইয়ে দাও।’ চিত্রনিভার লেখা স্মৃতিকথা -য় আমরা তাঁর অকপট-কথনের ভিতর দিয়ে এমনিভাবে তাঁর একান্ত কাছের মানুষ রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে অজ্ঞাত ও অল্পজ্ঞাত অনেক তথ্যই উঠে আসতে দেখি যার ভিতরদিয়ে সমগ্র মানুষটির ব্যক্তিত্ব, রসবোধ, সচেতনতার সঙ্গে পিতৃস্নেহের ফল্গুধারা বয়ে যেতে দেখা যায়।

চিত্রনিভা যত বার রবীন্দ্রনাথকে ছবি দেখাতে যেতেন তত বার তিনি আগ্রহের সঙ্গে ছবিগুলি দেখে তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেছেন, ‘‘তোমার শক্তি আছে, তুমি পারবে, তোমায় আশীর্বাদ করলুম।’’ চিত্রনিভা যখন প্রথম শান্তনিকেতনে আসেন তখন ছাত্রীনিবাস ছিল ‘দ্বারিক’। তখন সেখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। গুরুদেবের ইচ্ছানুসারে তখন মেয়েরা পালা করে ছোট্ট শিশুদের দেখাশোনা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে কবিগুরুর উদ্যোগে ‘শ্রীসদন’ নামে নতুন ছাত্রীনিবাস গড়ে ওঠে। তখন দেশ-বিদেশ থেকে কোন‌ও নতুন মেয়ে শ্রীসদনে এলেই চিত্রনিভা তাঁদের নিয়ে গুরুদেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। কবিগুরু সবাইকে বলতেন, ‘‘চিত্রনিভা হচ্ছে নূতনের সঙ্গী।’’ কবিগুরু সব সময়‌ই বলতেন, ‘‘বিদেশিরা আমাদের অতিথি, তাদের যেন কোন‌ও অযত্ন না হয়।’’