জর্জিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সালোমে জোরাবিসভিলি

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৬ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৯

অনলাইন ডেস্ক

জর্জিয়ার ক্ষমাতাসীন দলের প্রার্থী সালোমে জোরাবিসভিলি দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। খবর বিবিসি এর। 

স্থানীয় সময় ২৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়। 

এর আগে স্থানীয় সময় ২৮ নভেম্বর (বুধবার) দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। নির্বাচনে ফরাসি বংশোদ্ভুত ক্ষমতাসীন ‘জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি’র নেতা সালোমে জোরাবিসভিলি  ৫৯ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গ্রিগল ভাশাদেজ ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পান।

দেশটির রাজধানী তিবিলিসিতে থাকা বিবিসি প্রতিনিধি জানিয়েছে, মাত্র ২ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথম দফা নির্বাচন থেকে প্রায় ২০% ভোট বেশি পেয়েছেন জোরাবিসভিলি। অনেকেই তাই এই ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে নির্বাচনে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক দল বলছে, নির্বাচন ছিল সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

নির্বাচনে জয়ী সালোমে জোরাবিসভিলি নিজের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীর যে অল্প কয়েকজন নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, আজ তাদের তালিকায় আমার নাম উঠে আসলো। আমি সত্যিই আনন্দিত। জর্জিয়াবাসী দেখিয়েছে, তারা আসলেই বিদেশীদের আপন করে নিতে পারে। তাই তারা ইউরোপকে বেছে নিয়েছে।

জর্জিয়ায় এটিই সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কারণ দেশটি ২০২০ সাল নাগাদ সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তাই অনেকেই সংসদীয় নির্বাচনের একটি ট্রায়াল হিসেবে এই নির্বাচনকে দেখছেন। দেশটি বর্তমানে ন্যাটো আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। 

এদিকে, বিরোধী দল এ নির্বাচনে জালিয়াতি ও সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ তুলেছে। যদিও ক্ষমতাসীন পার্টি সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

এক নজরে সালোমে জোরাবিসভিলি

জন্ম: ১৮ মার্চ ১৯৫২ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে এক শরণার্থী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১৯২১ সালে তার পরিবার রাশিয়া থেকে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করে।

শিক্ষাজীবন: ফ্রান্সের বিভিন্ন স্বনামধন্য স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেন এবং ১৯৭২ সালে তিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পররাষ্ট্র বিষয়ে মাস্টার্স শুরু করেন।

কর্মজীবন:  মাস্টার্স শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা শেষ করেননি। ১৯৭৪ সালে তিনি ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এবং কূটনৈতিক হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথম কর্মস্থল ছিল ইতালির রোমে। এরপর তিনি জাতিসংঘ, ব্রাসেলস, ওয়াশিংটনে কূটনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ওয়াশিংটনের ফ্রান্স দূতাবাস থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মত জর্জিয়া আসেন এবং ২০০৩ সালে তিনি জর্জিয়ায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ শুরু করেন। 

রাজনৈতিক জীবন: ২০০৫ সালে তিনি প্রথম ‘সালোমে জোরাবিসভিলি মুভমেন্ট’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে তার প্রথম রাজনৈতিক দল ‘জর্জিয়াস ওয়ে’ আত্মপ্রকাশ করে। যার মূল কাজ ছিল মূলত জর্জিয়ার তৎকালীন স্বৈরশাসন নীতির সমালোচনা করা। যদি জর্জিয়ায় জোরাবিসভিলি সচেতন বুদ্ধিজীবি সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত পেতে তার অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে তার দল মাত্র ৩% এর কাছাকাছি ভোট পায়। ২০১০ সালে তিনি  ‘জর্জিয়াস ওয়ে’থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন এবং ২ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর তিনি বেশ তোড়জোর নিয়ে দেশটির সরকারী দল ‘জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি’র জন্য কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহনের জন্য আগ্রহ দেখান কিন্তু তৎকালীন নির্বাচন কমিশন তার ফ্রান্স-জর্জিয়া দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য তার মনোনয়ন বাতিল করে। 

২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবারও অংশগ্রহন করলেন এবং প্রথম দফায় ৩৮ শতাংশ ভোট পান। যা তার বিরোধী প্রার্থী গ্রিগল ভাশাদেজ থেকে মাত্র ১ শতাংশ বেশি ছিল। নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউণ্ডে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন সালোমে জোরাবিসভিলি। 

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৩৯ সালে সালোমে জোরাবিসভিলি জর্জিয়ান সাংবাদিক জানরি কাশিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি কেটভেন ও তৈমুর নামে দুই সন্তানের জননী।