নাওমি ওসাকা: গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী প্রথম জাপানি

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৭

অনলাইন ডেস্ক

ইউএস ওপেনে সেরেনা উইলিয়ামসকে পরাজিত করে প্রথম কোন জাপানি খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা।

২০ বছর বয়সী ওসাকার এটিই প্রথম কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল। আর প্রথমবারই ওসাকার আদর্শ তারকা খেলোয়াড় সেরেনার বিপক্ষে মাঠে নামতে হয়েছে ওসাকাকে।। ইউএস ওপেনের ফাইনালে ৬-২, ৬-৪ সেটে সেরেনাকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছেন জাপানি এই তরুণী।

ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মকভাবে খেলতে থাকেন ওসাকা। প্রথম সেট হেরে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলা সেরেনা এক পর্যায়ে টেনিস র‍্যাকেট ছুড়ে মারেন মাটিতে। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস রামোসের সাথে। বাধ্য হয়েই নাওমিকে এক গেম পেনাল্টি দেন আম্পায়ার। ফলে ৫-৩ গেমে এগিয়ে যান নাওমি।

ম্যাচ শেষে নাওমি বলেছেন, এই মুহূর্তে ঠিক সেভাবে কোনো কিছু অনুভব করতে পারছি না। হতে পারে কয়েকদিন পর আমি বুঝতে পারবো কী অর্জন করেছি। যখন আমি দ্বিতীয় সেটে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলাম তখন কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ি। আমার মনে হয়েছে এবার আমাকে আরো একটি বেশি মনোযোগী হতে হবে। সেরেনা এমন একজন খেলোয়াড় যে কিনা যেকোন সময় যেকোন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতে পারে।

শিরোপা নাওমি জিতলেও পুরো ম্যাচে উপস্থিত দর্শকদের সমর্থন ছিল সেরেনার দিকেই। এ নিয়ে ম্যাচ শেষে নিজের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে নওমি বলেন, আমি জানি যে সবাই তার জন্যই গলা ফাটাচ্ছিলেন। আমি দুঃখিত যে আপনাদের মনের ইচ্ছে মতো ম্যাচটি শেষ হয়নি। আমি শুধু আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যে আপনারা ম্যাচটি দেখতে এসেছেন।

ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে পুরো স্টেডিয়ামে প্রায় বেশির ভাগ স্বাগতিক সমর্থকই যখন স্বাভাবিকভাবেই ২৩ টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী সেরেনার জন্য চিৎকার করছিল তখন নাওমি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ওই সময় নতুন চ্যাম্পিয়নের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমর্থকদের অনুরোধ জানিয়ে সেরেনা বলেন, সে দারুন খেলেছে। এটা তার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তার এই মুহূর্তটাকে সেরা হিসেবে আমরাই উপহার দিতে পারি।

এদিকে নাওমি স্টেডিয়ামের দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনার বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে তার বিপক্ষে খেলতে পেরেছি।


এক নজরে নাওমি ওসাকা: 

১৯৯৭ সালের ১৬ অক্টোবর জাপানের ওসাকাতে জন্মগ্রহন করে নাওমি ওসাকা। ১৯৯৯ তে সেরেনা যখন প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেন, নাওমির বয়স ছিল দু’বছর। নাওমির মা জাপানি, বাবা হাইতির। সেরেনাই তার আইডল। তিন বছর বয়সেই নিউ ইয়র্কে চলে আসেন তিনি। ২০১৩ সালে পেশাদার টেনিস শুরু করেন নাওমি। এখন ফ্লোরিডার মিয়ামিতে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সাসচা বাজিনের কাছে টেনিসের পাঠ নেন নাওমি। এই সাসচাই সেরেনাকে আট বছর ট্রেনিং দিয়েছেন।

নাওমি ২০১৪ সালে অকল্যান্ডের ওয়েস্ট ক্লাসিকে ডব্লিউটিএ ট্যুরের প্রথম মেইন-ড্র’তে আসেন।  ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম অভিষেক হয় কোয়ালিফায়ার হিসেব।  টুর্নামেন্টের ১৮ তম বাছাই এলিনা সিতোলিনার বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডে জয় পান। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া আজারিঙ্কার কাছে হেরে যান তিনি। ২০১৬-র এপ্রিলে প্রথমবার কেরিয়ারে প্রথম ১০০-তে আসেন (তারপর প্রথম ৫০-এ আসেন সেই বছরই)।

২০১৮-র মার্চে ইন্ডিয়ান ওয়েলস জিতে প্রথম ডব্লিউটিএ খেতাব পান তিনি। মারিয়া শারাপোভা, ক্যারোলিনা পিলসকোভা ও সিমোনা হালেপের মতো তারকাদের হারিয়েছিলেন তিনি। পরের সপ্তাহে মিয়ামিতে সেরেনাকেও ধরাশায়ী করেছিলেন। চলতি বছর ১৭ জুলাই ক্যারিয়ারের সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে আসেন। এই মুহূর্তে ১৯ নম্বরে তিনি। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) নতুন ক্রমতালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সাত নম্বরে উঠে আসবেন।

জাপানের প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন হলেন নাওমি। গ্র্যান্ড স্লাম তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার পরেই ‘নিউকামার  অব দ্য ইয়ার’ খেতাব পান তিনি। ২৩ বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জেতেন নাওমি।  দ্বিতীয় উপমহাদেশের খেলোয়াড় হিসেবে চিনের লি না’র পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেজর খেতাব জিতলেন নাওমি।