জাতিসংঘের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট বিজয় লক্ষী পন্ডিত
প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০১৭, ২১:০৩
অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রভাবশালী সর্বজনবিদিত রাজনৈতিক নেতা মতিলাল নেহরুর কন্যা বিজয় লক্ষী পন্ডিত স্বীয় মেধা ও রাজেনৈতিক প্রজ্ঞা দ্বারা প্রথম নারী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্রেসিডেন্টের পদ অলঙ্কৃত করেন। তার ভাই জওহরলাল নেহেরু ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য যে, যেখানে তার ভাই জওহরলালকে ইংল্যান্ডে হ্যারো ও কেমব্রিজে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠানো হয় সেখানে বিজয় লক্ষীকে গৃহশিক্ষিকার সাহায্যে শিক্ষাদান করা হয়। তাঁর শিক্ষিকা ছিলেন ইংরেজ গভর্নেস মিস হুপার। তিনি কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ করেননি। ১৯২১ সালে লক্ষ্মী রঞ্জিত পন্ডিত নামে একজন আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবীকে বিয়ে করেন।
বিজয় লক্ষী পন্ডিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য জনপ্রিয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর সাথে যোগদান করেন। বিজয় লক্ষী পন্ডিতের তিন কন্যা জন্মে এবং তাদের শিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা করে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন এবং এলাহাবাদ থেকে আন্দোলন শুরু করেন বিজয় লক্ষী এলাহাবাদ থেকে জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বিচিত্র। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি ২৭ মাস কারাবরণ করেন। তাঁর স্বামীও স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন এবং দীর্ঘদিন কারাবরণ করে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই তিনি ভারতবর্ষে থেকে জাতিসংঘে (UNO) প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তিনি সেখানে আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের নিন্দা করেন। তাঁর বাচনভঙ্গি সকলকে মুগ্ধ করেন।
বিজয় লক্ষী পন্ডিতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জীবন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তিনি মস্কোতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত ভারতীয় পার্লামেন্টের সদস্য পথ অলঙ্কৃত করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য আসে যখন তাঁকে ১৯৫৩-৫৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। এরপর তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত লন্ডনে ভারতের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাঁকে রাষ্ট্রদুত করে স্পেনে পাঠানো হয় কূটনৈতিক জীবনশেষে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং মহারাষ্ট্রের গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি দুবছর (১৯৬২-৬৪) মহারাষ্ট্রে কৃতিত্বের ফেলে শাসন পরিচালনা করেন। বিজয় লক্ষী পন্ডিত ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।