যমুনা-ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে
প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৭, ১৬:০১
যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধায় নতুন করে চার উপজেলার অন্তত ২০টি ও কুড়িগ্রামে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১০ জুলাই (সোমবার) সকাল থেকে নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ক্রমেই বাড়ছে। এতে করে জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের আরো প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার চার উপজেলার ৪০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তবে তিস্তা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে চরাঞ্চল ও তীরবর্তী অঞ্চলের আরও বেশ কিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হতে পারে।
বন্যার পানিতে বালাসী-উড়িয়া সড়কসহ বেশ কিছু কাঁচা রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, আমন বীজতলাসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলার কাইয়ারহাটসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ, স্কুলের মাঠ ও রেলের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব স্থানে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ছাপড়া বা অস্থায়ী ঘর তৈরি করছেন তারা।
এদিকে, এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত এসব মানুষ কোনো ধরনের ত্রাণ সাহায্যে পাননি বলে জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোথাও ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১০ জুলাই (সোমবার) সকাল থেকে নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার চারটি উপজেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল- চরাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১০ জুলাই (সোমবার) সকাল ৬টায় পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। সকাল ৯টার পর থেকে ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি গেট খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যারাজ এলাকাসংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। সেই পানি প্রবল বেগে আসছে তিস্তা ব্যারাজের দিকে। ফলে পানির চাপ সামলাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেটের সবকটি খুলে রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত বেশির ভাগ মানুষ চার দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে।
নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে এসব মানুষের। বন্ধ রয়েছে জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি।
জেলা ত্রাণ শাখা সূত্র জানায়, বন্যার্তদের জন্য ১০৫ টন চাল ও তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে ৮৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যারা বন্যাকবলিত মানুষের জন্য কাজ করছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৯ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে।