‘চাইলেই এড়ানো যেতো এ মৃত্যুর মিছিল’
প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ০২:৫৬
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেই পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল এড়ানো যেত, বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদ কামাল। এর মধ্যেই তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান আর চট্টগ্রাম মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন পাঁচ সেনা সদস্য। এই মৃত্যুকে প্রশাসনের ব্যর্থতা বলছেন এই দুর্যোগ বিশারদ।
অধ্যাপক মাসুদ কামাল বলছেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা কখন ঘটে? এবার যে আগাম বর্ষা হবে, তা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ যাওয়ার সময়ই বলে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন কানে তোলেনি’।
আষাঢ় শ্রাবণের অপেক্ষা করেনি। বছরের শুরু থেকেই বাংলায় বর্ষা নেমেছিল। গেল দুই দিনে বৃষ্টি হয়েছিল ৩৪০ মিলিমিটারেরও বেশী। আর বালু মাটির তৈরি এই অঞ্চলের পাহাড় ধসের প্রবণতা প্রাকৃতিক ভাবেই প্রবল। এই পাহাড়গুলোর স্লোপ এঙ্গেল ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী। পাহাড় সহজেই পানি দ্বারা স্যাচুরেটেড হয়। তার ফলে গ্রাভিটির কারণে সহজেই ধসে যায়। এই শিক্ষা থেকেই সচেতন হওয়া যেতো, বলছেন মাসুদ কামাল। আর সতর্ক হলেই মৃত্যুর মিছিলও এড়ানো যেতো।
তবে মেলানো এই সমীকরণ কখনোই কানে তোলেনি প্রশাসন। ২০০৭ সাল থেকে এই অঞ্চলগুলোতে একের পর এক ভূমিধস হয়েছে। মানুষ মরেছে। প্রশাসন কমিটি করেছে। কমিটি সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এমন এক কমিটিতে ছিলেন অধ্যাপক মাসুদ কামালও।
তিনি বলছেন, সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অনেক প্রাণই রক্ষা পেতো!
এমনিতেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে আগেই জানা যায়, কখন অতিবৃষ্টি হবে। এবারও টানা বৃষ্টির সময়-কাল জানা। বলা যায়, অনেকটা বলে-কয়েই এবার ভারী বৃষ্টি এলো; যা হওয়ার ছিল, তা-ই হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে নরম পাহাড় ধসে মানুষ মারা গেলো।
আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকানো যেতো। সেই সক্ষমতাও বাংলাদেশের আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, এই কাজ কখন কীভাবে করবে, কেন করবে, সেই পরিকল্পনা নেই।
বাংলাদেশে পাহাড়ধসে সাধারণত গরিব মানুষেরাই মারা যায়। তাই কর্তাব্যক্তিদের এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। এবার তো সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করলেন। তবুও কি টনক নড়বে?
অনেক ক্ষেত্রে পাহাড়ে গরিব মানুষেরা বসতি গড়ছে। এদের ৯৩ ভাগই রুটি-রুজির সন্ধানে আসা অন্য জেলার মানুষ। পাহাড় খাদক দখলদারেরা বাঁচার আশা নিয়ে আসা মানুষদের এখানে বসিয়ে দেয়। উদ্বাস্তুর আশা মাথা গোঁজার ঠাঁই, আর দখলদারের আশা জমি-মাটি-টাকা। সমতলের বাঙালিরা পাহাড়ে বসতি গড়ার কায়দা-কানুন জানে না। তারা মাটি আর পাহাড়ের তফাত বুঝতে পারে না। পাহাড়ে বসবাসের তরিকা রপ্ত করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
প্রকৃতির সঙ্গে জোর খাটানো চলে না। প্রকৃতিকে সম্মান করেই পাহাড়ে বসতি গড়া সম্ভব। পাহাড়ে পরিকল্পিত বসতি গড়লে এ ধরনের প্রাণহানি এড়ানো যায়।
লেখক: সাংবাদিক