সুন্দরবনে করমজলের কুমির

আরও ১৯টি বাচ্চা হত্যা, হদিস নেই ৩৭টির

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:৪৮

অনলাইন ডেস্ক

সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পটের কুমির প্রজনন কেন্দ্র হতে কুমির ‘রোমিও, পিলপিল-জুলিয়েট’ দম্পত্তির আরও ১৯টি বাচ্চা মারা পড়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) দুপুরে মৃত কুমির বাচ্চাগুলোর খন্ডিত দেহবাশেষ উদ্ধার করে বনবিভাগ। এ নিয়ে গত ৫ দিনের ব্যবধানে ৫৯টি কুমির বাচ্চা হত্যা ও গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। তৃতীয় দফায় এ কুমির বাচ্চার হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বনবিভাগ।  

বনবিভাগের দাবি-শেষ দফায় মৃত উদ্ধার ১৯টি কুমির বাচ্চাগুলো বন্যপ্রাণীর আক্রমনে মারা পড়েছে। তবে এ নিয়ে বনবিভাগের অভ্যন্তরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। 

বনবিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি পুর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র হতে দু’দফায় ৩৭টি কুমির বাচ্চা রহস্যজনক ভাবে গায়েব হয়। এছাড়া মৃত উদ্ধার হয় আরও ৬টি কুমির বাচ্চা। এ ঘটনার পর প্রজনন কেন্দ্রের বনরক্ষী মাহবুব আলম লস্কর ও চুক্তিবিক্তিক বেতনের কর্মচারী মোঃ জাকির হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়।

ইতোমধ্যে এ নিয়ে বনবিভাগের গঠিত দুটি কমিটির একটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও আরেকটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকাল ১১ টার দিকে নতুন করে মারা পড়ে আরও ১৯টি কুমির।

এ প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণী বিভাগের বনসংরক্ষক মোঃ জাহিদুল কবির জানান, কুমিরের প্যানে থাকা বাচ্চাগুলো রুটিন মাফিক দেখভালের সময় একটি প্যানে ১৬টি ও আরেকটি প্যানে ৩টি কুমির মৃত দেখা যায়। এগুলো প্যানের (সংরক্ষণ পুকুর) পাশের দিকে বিছিন্নভাবে দেখা যায়। প্রাথমিক ভাবে মৃত কুমির বাচ্চাগুলোর গাড়ে কামড় ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে দেখা গেছে। হিংস্র বন্যপ্রাণী আক্রমন চালিয়ে এ কুমির বাচ্চাগুলো হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

এদিকে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বনবিভাগের নজরদারি বাড়ানো হয়ছে। নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে অন্য প্যানে থাকা ২১৫টি কুমির বাচ্চাকে। রাতেই ওই প্যান এলাকায় ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানায় বনবিভাগ। যাতে সহজে অবলোকন করা সম্ভব হয় কি ভাবে কুমির বাচ্চা গায়েব ও হত্যার ঘটনা ঘটছে।

আগের ৪৩টি কুমির বাচ্চা গায়েব ও হত্যার ঘটনায় খুলনার দাকোপ থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, দুপুরে ডিএফও সাইদুল ইসলাম তাকে করমজল থেকে ফোন করে জানিয়েছেন আরো ১৯টি কুমিরের বাচ্চা বন্যপ্রাণী খেয়ে ফেলেছে। এগুলোর ছিন্নভিন্ন শরীর করমজলে পড়ে আছে।

তৃতীয় দফায় ১৯টি কুমির মারা পড়ার ঘটনায় রবিবার বিকালে করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ তহিদুল ইসলাম দাকোপ থানায় আরও একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন বলে জানা গেছে। তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে দফায় দফায় বিভাগীয় বনকর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ও সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে ফোন করলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার ফোন নাম্বার খোলা পেলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর নিজের ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ রাখেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি করমজল থেকে ৩৭টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়। আরও মারা পড়া ৬টি কুমির বাচ্চার বিষয়ে বনভিাগ প্রথমে শেয়াল বা বন্যপ্রাণী খেয়েছে এমন দাবি করলেও কয়েকদিন পর সেই দাবি থেকে সরে আসে তারা।