সুন্দরবনে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ৩৮ কুমির চুরি
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫২
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একমাত্র কুমির প্রজননকেন্দ্রের ৩৮টি কুমিরের বাচ্চা চুরি হয়েছে। চুরি হওয়ার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।
এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং জাকির হোসেন নামে এক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া বন বিভাগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, করমজলে প্রজনন কেন্দ্রের দুটি প্যানে (কৃত্রিম পুকুর) দুই বছর বয়সী কুমির রাখা হয়। সেখানে গত ২৯ জানুয়ারি (রোববার) রাতে কুমিরের পাঁচটি ছানা মৃত পাওয়া যায় ও ৩৮টি ছানা নিখোঁজ হয়। দায়িত্বরত কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদীজ্জামানকে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।
গঠিত তদন্ত কর্মকর্তা সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মো. মেহেদীজ্জামান জানান, কোন হিংস্র প্রাণি যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করতো কিংবা খেয়ে ফেলতে তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। তবে এমন কোন আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর বয়সী এই কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি কিংবা পাচার করে দেওয়া হয়েছে। চীন, মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের গোল্ডেন ট্রাংগল নামের আন্তর্জাতিক চোরা বাজারে কুমিরের বাচ্চার চড়া মূল্য থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই চুরি ও পাচার কাজের সাথে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমি ওই দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িত বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে। এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় লবণাক্ত পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি, লালন-পালন ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই সরকারি এই কুমির প্রজনন কেন্দ্র।