পাহাড়ে নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০২:১৭ | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০২:৩৯
গত বছর থেকে এই বছরের শুরুর দিকে পর্যন্ত দীর্ঘসময় ধরে চলা এক অনুসন্ধানে কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে খোঁজ মিলেছে বিরল প্রজাতির এক ব্যাঙের। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো Gerbil's stream frog নামে এই ব্যাঙের সন্ধান প্রাপ্তি ও সনাক্ত করা হলো।
গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার এর নেতৃত্বে 'নদী ও জীবনের সন্ধানে'র অনুসন্ধানী দল Gerbil's stream frog নামে নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ এর অস্তিত্ব রেকর্ড করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম এর রাঙামাটি জেলার বরকল রিজার্ভ ফরেস্ট এর মিশ্র-চিরসবুজ বনাঞ্চলের একটি পাহাড়ের গায়ে এই ব্যাঙের অবস্থান খুঁজে পান তারা। নদী ও জীবনের সন্ধানে গবেষণা দলের প্রধান উপদেষ্টা ড. আনিসুজ্জামান খান এর সাথে অনুসন্ধানী দলের ফজলে রাব্বি লিটন, সাকিল অরণ্য, হোসেন সোহেল ও রাজীব বরকল রিজার্ভ ফরেস্ট এর পাহাড়ের গায়ে একটি গাছের কোটরের ভেতর প্রথম এই বিরল প্রজাতির ব্যাঙের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এরপর ব্যাঙটির প্রজাতি, আকার, আকৃতি, স্বভাব, বাসস্থান সবকিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্রে ধারণ করা হয়।
বহু গবেষণা ও ব্যাপক পড়াশুনা করার পর ড. আনিসুজ্জামান খান ব্যাঙটিকে Amolposgerbillus (Anaandale 1912) প্রজাতি, Ranidaeof পরিবার ও Amphibia শ্রেণির বলে সনাক্ত করেন, যার সবচেয়ে কাছাকাছি ইংরেজি নাম হচ্ছে Gerbil's stream frog, Small-eared torrent frog এবং Yembung sucker frog।
অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা জানান, ব্যাঙটির সামনের দিকে ছোট ছোট গোল ছোপ রয়েছে। পশ্চাতভাগ ছোট। এর ত্বক অমসৃণ, সবুজ গায়ের উপর গাঢ় ইট রঙের ছোট ছোট ফুস্কুরি রয়েছে এবং পেটের দিকটা সাদা। এই ব্যাঙটি সাধারণত ভারত ও মিয়ানমারের উঁচু পাহাড়ি এলাকা ও খরস্রোতা এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদি নিবাস মূলতঃ উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারত, তিব্বত ও মায়ানমার। এর আগে শুধুমাত্র ভারতের অরুণাচল প্রদেশের দিহাং-দিবাং বায়োস্পেয়ার রিজার্ভ ও মৌলিং ন্যাশনাল পার্কে এর অবস্থান সনাক্ত করা হয়েছিল।
এটা সাধারণতঃ গ্রীষ্মপ্রধান চিরসবুজ বনাঞ্চলের জলধারা ও নদীতীরস্থ গাছপালায় বাস করে। তবে সবচেয়ে বেশি এদের খোঁজ পাওয়া যায় বনাঞ্চলে নিম্নভূমি থেকে উচ্চভূমির দিকে প্রবাহিত তীব্র স্রোতের স্বচ্ছ পানির ধারা ও তার আশেপাশের নুড়ি পাথর ও প্রস্তর এলাকায়।
পানিতেই এদের প্রজনন হয়। তবে তাদের ডিম দেয়া ও লার্ভা সৃষ্টির বাস্তবিদ্যা সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
ড. আনিসুজ্জামান খান বলেন, এই নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কারের পর এটা বলা যায় যে বাংলাদেশ এখন বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন প্রজাতির এক নতুন ভৌগোলিক সীমায় পরিণত হয়েছে। এখন এই প্রজাতির ট্যাক্সোনোমি, সংখ্যা, জীবনচক্র এবং বাস্তুসংস্থান নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
ব্যঙটির স্বভাব ও বাসস্থান এর কারণে কবির বিন আনোয়ার এর নতুন বাংলা নাম প্রস্তাব করেছেন 'ঝর্ণাপরী'।
ছবি কৃতজ্ঞতা: একাত্তর টেলিভিশন