গণহারে কুকুর হত্যা, ফেসবুকে প্রতিবাদ
প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৫৯ | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৩
কুকুর হত্যা করা থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। হত্যা না করে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমেই বর্তমানে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু ভিন্নচিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) এলাকায়। সেখানে গণহারে কুকুর হত্যা করেছে সিসিসি’র বর্জ্য পরিষ্কার দল।
অন্তত ১৫টি কুকুরকে হত্যার পর আন্দরকিল্লা চকবাজার লিংক রোডের ঘাট ফরহারবেদের ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক কুকুরের পাশাপাশি হত্যা করা হয়েছে শিশু কুকুরগুলোকেও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছে এই কুকুরগুলোকে। সর্বশেষ সিসিসি’র বর্জ্য পরিষ্কার দলটি ট্রাকে করে ডাম্প করছে কুকুরগুলোকে।
সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক গণহারে কুকুর হত্যার ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে এ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ডাস্টবিনে অনেকগুলো কুকুরের লাশ পড়ে আছে এমন মর্মান্তিক ছবি-সহ তন্বী নামে এক প্রাণীপ্রেমী ফেসবুকে লিখেন, “আমার ফ্রেন্ডলিস্টে অনেকে চিটাগাং এ বাসিন্দা আছেন.. তারা অনেকে animal lover না.. তবে তারা এতটা নিচে নামেনি যে প্রাণ নেওয়া support করবে।
চিটাগাং এ এতগুলো অবলা বোবা প্রাণিদের মারল.. ওদের জন্য আপনাদের কিছু করার নেই? ওদের দোষটা কি ছিল? সিটি কর্পোরেশন এর আওতায় প্রতিদিন কুকুর মারা হচ্ছে......কোন কমিশনার হাই কোর্টের পেপার টা খুব পাত্তা দিচ্ছেন না...... উনাদের গিয়ে ধরলে অস্বীকার করেন...... এবং তাদের কথা অনুযায়ী প্রতিদিন শত শত কমপ্লেইন জমা পড়ছে কুকুর মারার জন্য... কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না”
ফেসবুকে সাংবাদিক সাকিল অরণ্য লিখেন, “কুকুর এমন একটি প্রাণী যা মানুষ তথা প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশের কেবল কল্যাণ করেই যায়। এই প্রাণীটি প্রকৃতিতে আছে বলেই বহু রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকি আমরা।
নিরীহ ও সর্বদা উপকারী এই প্রাণীদের হত্যা করা হচ্ছে! মর্মান্তিক কাজটি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নগরের আন্দকিল্লা চকবাজার লিংক রোডের ঘাট ফরহারবেদ, আগ্রাবাদ মিস্ত্রীপাড়া, আ্গ্রা্বাদ হাজীপাড়া, কোতোয়ালি এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চলছে! এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”
সাংবাদিক অঞ্জন রায় লিখেন, “একটু আগে ইনবক্সে কিছু ছবি পেলাম- চট্টগ্রামের। দ্বিপদী আর চতুস্পদীর তফাৎ ভুলিয়ে দেয়ার জন্য এমন ছবি যথেস্ট। অজস্র কুকুর মেরে ডাস্টবিনে ফেলে রাখা- মানুষ হিসাবে এই প্রানীগুলোর কাছে আমি ল্জ্জা পাচ্ছি। সত্যি হলো- এটা অন্যায়, আমার হিসাবে অনাচার। এই ছবিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়- মানুষ মানেই মানবিক নয়। প্রানীগুলো সরানোর বিকল্প অন্য পথ অবশ্যই আছে- এভাবে খুন করে ডাস্টবিনে ফেলাটা অন্যায় ও নিন্দনীয়। প্রতিবাদ করছি- বন্ধুরা, সরব হোন। এই প্রানীগুলো মেরে সরানোর চাইতে- সংখ্যা নিয়ন্ত্রন ও জলাতঙ্ক টীকা দান কর্মসসূচি জরুরি।”
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক মিঠু ফেসবুকে লিখেন, “বোবা প্রাণী কুকুরের জন্য একটুকু ভালোবাসা কি আমরা দেখাতে পারি না? আজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ডে আইন বর্হিভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে মানুষ ভক্ত এই প্রাণীদের... আমরা কি পারি না তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে?”
কুকুর হত্যার প্রতিবাদে ব্লগার ফারজানা নীলা ফেসবুকে লিখেন, এই নির্বোধ প্রাণগুলোর কী অপরাধ? অপরাধ তারা অসহায় অবলা মুখে বলে বুঝাতে পারে না বাঁচার আকুতি। তাদের অপরাধ এক সভ্য দেশে জন্ম নিয়েছে যে সভ্য দেশের সভ্য মানুষরা তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে খুন করে নিজেদের সভ্যতা প্রমাণ করে সগৌরবে। কুকুর নিধন বাংলাদেশ আইনে অন্যায়। আর কী চমৎকার ভাবে এই অন্যায় কাজ সিটি কর্পোরেশনের লোকজন বীরদর্পে করে যাচ্ছে। মানুষ তোরা এমন অমানুষ কেন! থু!”
বেণুবর্ণা অধিকারী লিখেছেন, "ঘরে কুকুর রাখা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ কুকুরের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর নির্দেশ কেবল এটাই যে শখ করে ঘরে কুকুর রাখা নিষেধ। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ঘরে কুকুর আছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। ’ (বুখারি শরিফ : হা. ৫৫২৫) আর কুকুরের লালা যেহেতু নাপাক, তাই কোনো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তা তিন বা সাতবার ধৌত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এইবার প্রশ্ন আসে চট্টগ্রামে এই যে গনহারে নির্মমভাবে কুকুর মারা হচ্ছে এটা কি এই বোধ থেকেই? আমরা কি ক্রমেই মানবতা বিসর্জন দিয়ে নিজেরাই বর্বর প্রানীতে পরিনত হচ্ছি?
সিটি কর্পোরেশনের কি এই ব্যাপারে কোনই দায়িত্ব নেই? এটা কি তাদের মদদেই হচ্ছে? জলাতঙ্ক কুকুরের মাধ্যমে ছড়ায় বলেই সুস্থ কুকুরও সমূলে মেরে ফেলতে হবে এ কেমন যুক্তি?
জলাতঙ্কের জন্য ভ্যাক্সিন দিতে পারে, মেরে ফেলা আইনত দণ্ডনীয়। জীবজন্তু সংরক্ষন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকরী ভূমিকা নেয়া হোক।"
এ বিষয় সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. সেলিম জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এরকম কোন নির্দেশনা ছিলো না।
নির্দেশনা ছাড়া এভাবে কুকুর হত্যার কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তাও নিশ্চিত করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।