অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশে বিরুপ প্রভাব
প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:০৫ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:৫৩
রাজশাহী জেলাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। তবে এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো অবৈধ এসব ইটভাটা থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। অন্যদিকে এসব ইটভাটার জন্য বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।
রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ১৮৫টির মতো ইটভাটা আছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তবে এসব ইটভাটা মালিকরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন নিয়ম মতোই।
পরিবেশ অধিদফতর বলছে, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ইটভাটা মালিকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির জন্য সরকার সহায়তায় এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় আবার জনবসতির খুব কাছাকাছি। ফলে এসব ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরুপ প্রভাব। তাছাড়া একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে দিন দিন।
ভাটা মালিকদের বক্তব্য, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তাই চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটা। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০ লাখ ইটের বিপরীতে প্রায় চার লাখ টাকা রাজস্বও দিতে হচ্ছে সরকারকে।
জেলার পবা উপজেলার কুখন্ডি জয়পুর এলাকার ইটভাটা মালিক আবদুর রাজ্জাক ও সাকির উদ্দিন সেন্টু বলেন, আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একইসাথে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাটা স্থাপন করেছি।
তারা জানান, ভাটাগুলোর বৈধকা না থাকার কারণে পুলিশের উৎপাতও বেশি। থানা পুলিশকে চাঁদা দিয়েই তাদের চলতে হচ্ছে। তারা লাখ লাখ টাকা সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছেন, অথচ বৈধতা পাচ্ছেন না। প্রশাসন ঝামেলা করছে। তাদের অনেক টাকাও দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট তন্ময় সান্যাল বলেন, সরকার অনুমোদিত যে চারটি পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো বা প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে, তা খুবই ব্যয় বহুল। এ কারণে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে একটি জেলার সব মালিক বা উদ্যোক্তারা এক হয়ে একটি বা দুটি ভাটা তৈরি করলেও এর সমাধান হতে পারে। জেলায় এতবেশি ভাটারও তো প্রয়োজন হয় না। এ জন্য মালিকদের কড়া নজরদারির মধ্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি সাদরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান আইনের জটিলতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। এই আইনের সংশোধন করা উচিত। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
তবে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলছেন, নানা কারণে প্রভাবশালীরা অনুমোদন না নিয়েই ইটভাটা তৈরি করছেন। মাঝে-মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। আইন না মানলে কোনো ভাটাই চলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গেল ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১১৮টি ইটভাটায় ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে আড়াই কোটি টাকার ওপরে। আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১২৪ ইটভাটায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। তবে আদায় হয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৮৬ লাখ টাকা। আর সার্টিফিকেট মামলা চলছে ১০৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে।
অবৈধ ইটভাটা থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার রুহুল আমিন বলেন, ‘কোন ভাটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ এটি অমাদের আমাদের দেখার বিষয় নয়। যার যার দফতর কাজটাও তার। আমরা নিয়ম অনুয়ায়ীই ভ্যাট আদায় করছি।’
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করলে অনধিক এক বছরের কারাদন্ড অথবা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।