প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:১৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

পূর্ব নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক সম্মেলনের জন্য গৃহীত ‘প্যারিস চুক্তি’ আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি কার্বন নিঃসরণকারী ৮৪টি দেশের সংসদে চুক্তির অনুসমর্থন অনুমোদন পেয়েছে।

আগামী ৭ থেকে ১৮ নভেম্বর মরক্কোর পর্যটন শহর মারাকেসে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘ কাঠামো সনদের (ইউএনএফসিসি) ২২তম বৈশ্বিক সম্মেলন (কপ) অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী এবং সচিবসহ একটি প্রতিনিধি দল এ সম্মেলনে অংশ নেবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থপ্রাপ্তির শর্তগুলো শিথিলতা করার বিষয়ে দাবি তোলা হবে বলে জানা গেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের টাকা খরচ করার মতো সক্ষমতা বা আমাদের অ্যাকাউন্ট সিস্টেম উন্নত নয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বেশি। তাই এই সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি (শিল্পবিপ্লব পূর্ব সময়ের তুলনায়) ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার জন্য প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১৯১টি দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মোট ৮৪টি সদস্য দেশ রয়েছে যাদের থেকে বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৬০ দশমিক ৯৮ উৎপন্ন হয়। এই হিসাব গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের।

গত ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে একদিনেই ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ১৭৫টি দেশ স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘ জানায়, কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তিতে এক দিনে এত বেশি রাষ্ট্রের একসঙ্গে স্বাক্ষরের এটি নতুন রেকর্ড।

যদিও প্যারিস চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার জন্য পৃথিবীর গ্রিন হাউস গ্যাসের অন্তত ৫৫ শতাংশ নির্গমন করে এমন অন্তত ৫৫টি দেশকে অনুসমর্থন গ্রহণ বা অনুমোদনের শর্ত গত ৫ অক্টোবর পূর্ণ হয়েছে। ফলে কপ-২২ সম্মেলনের আগেই চুক্তিটি কার্যকর হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য এই চুক্তিকে মনে করা হচ্ছে অন্যতম হাতিয়ার। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন একে অভিহিত করেছেন ‘ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি’ হিসেবে। আলোচিত এ চুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে প্রাক-শিল্পায়ন সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশিতে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশিতে সীমাবদ্ধ রাখা।

দেশভিত্তিক লক্ষ্য : চুক্তিতে প্রতিটি দেশেরই নিজ নিজ দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য স্থির করার কথা বলা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। 

স্বচ্ছতা : কোনো দেশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হলে তার জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়নি চুক্তিতে। তার বদলে দেশগুলোর নিজেদের প্রতিশ্রুত লক্ষ্য পূরণে স্বচ্ছতার নীতির ওপরেই নির্ভর করা হয়েছে প্যারিস চুক্তিতে।

অর্থ সহায়তা : জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রক্রিয়ায় অনুন্নত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য উন্নত দেশগুলোর অর্থ সহায়তা দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে। অন্য দেশগুলোকেও এক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে ধনী দেশগুলো এর আগে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ক্ষতিপূরণ : সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এরই মধ্যে হুমকির মুখে রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এসব দেশের জন্য ক্ষতিপূরণের একটি বিধান রয়েছে প্যারিস চুক্তিতে। যুক্তরাষ্ট্র এই ধারার বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত এই ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে।

কার্যকর : ৫৫ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ করা শীর্ষ ৫৫টি দেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের (র‌্যাটিফিকেশন) ৩০ দিনের মধ্যেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত