সুন্দরবনের হরিণ শিকার ও সাংবাদিকদের নৈতিকতা
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৬, ২১:৪৯ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬, ২১:৪৬
আসন্ন দুবলার চরের রাস মেলা মানেই বছরে একটি বারের জন্য হরিণ শিকার নিয়ে মিডিয়ায় এক নয় বরং বহু ধরণের নানা মাত্রায় সচেতনতা তৈরির হিড়িক লেগে যায়। সপ্তাহ-মাসব্যাপি চলে রাস মেলাকে ঘিরে হরিণ শিকারের অপতৎপরতা নিয়ে পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ নানা সংবাদ আয়োজন। কিন্তু বছরের পর বছর এই জিকির করা হরিণ সচেতন ব্যর্থ সংবাদ আয়োজন কতটা সুস্থ ঢঙে হরিণ রান্নার নিত্য সুঘ্রাণের লোভ সামলে উঠতে পেরেছে সেটি জানতে জানতে আমি বেশ বিব্রত।
“বিব্রত হতে গিয়েই চোখ পড়ল এটিএন বাংলার হরিণ শিকারের একটি এক্সক্লুসিভ নিউজ রিপোর্টে। বছরে একবারই হরিণ খাই, মন ভরে খাবো, যত খুশী তত খাব”। এক্সক্লুসিভ ঐ রিপোর্টে কথাটি নির্দিধায় বলেন একজন মুখঢাকা হরিণ শিকারী; হয় সে দস্যু অথবা বছরের একদিন হরিণ খেতে ইচ্ছুক গ্রামের সাধারণ কেউ। দস্যু হোক কিংবা শিকারী অথবা সাধারণ গ্রামবাসী রাস মেলা উদযাপনে খাবারের তালিকায় হরিণের মাংস থাকা চাই-ই চাই। সে বিচারে বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস মেলায় আগত জনসংখ্যার চাপের মাশুল দিতে হয় সুন্দরবনের নিরিহ হরিণদের। এটি আসলে রাস মেলার অনাকাঙ্খিত সত্য।
এমন অনাকাঙ্খিত সত্য নিয়ে গণমাধ্যমেরও উদ্বেগের শেষ নেই, তবে উৎসুক সংবাদ সংগ্রাহকদের এ নিয়ে অযত্ন অবহেলার শেষ নেই। পুরোন খবরগুলোকেই হুবহু নকল করে অবলীলায় প্রকাশ করলেও বোধহয় নূন্যতম জবাবদিহিতা নেই। তেমন কিছুই চোখে পড়ল ২০১৩ ও ২০১৫ সালের দু’টি পৃথক সংবাদে। ২০১৩ সালে সময়নিউজ২৪.নেট-এর রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘রাস মেলাকে ঘিরে সুন্দরবনে চোরা শিকারীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি’, সংবাদটির বিশদে পড়তে গিয়ে কিছু তথ্যও পেলাম যেমন – ‘নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক শিকারীরা জানান, নাইলনের ফাঁদ, জাল পেতে,স্প্রীং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, তীর বা গুলি ছুড়ে, কলার মধ্যে বর্শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদ সহ পাতার উপর চেতনা নাশক ঔষধ দিয়ে নিধন করা হয়ে থাকে বিপুল সংখ্যক হরিণ। শুধু এখানেই শেষ নয়, কোন ফাঁদে হরিণ ধরা পড়লে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থানরত শিকারীরা ছুটে গিয়ে আটক হরিণকে লাঠিপেটা করে মেরে নিরাপদ দুরত্ত্বে নিয়ে জবাই করে। এরপর চামড়া,শিং সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাঠিয়ে দেয়া হয় উপযুক্ত ক্রেতাদের কাছে। এরপর শুরু হয় মাংস দিয়ে ভুঁরিভোজের যত আয়োজন।
লন্ডন ভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাষ্ট অফ বাংলাদেশ ও জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্যমতে, সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশী হরিণ শিকারীদের হাতে মারা পড়ে। সুন্দরবনের বন বিভাগের হিসাব মতে, বনের বাংলাদেশ অংশে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রল হরিণ রয়েছে। তবে আয়তন, খাদ্য ও সার্বিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে এর প্রকৃত সংখ্যা। মেলা চলাকালিন আনন্দে মাতোয়ারা দর্শনার্থী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব চোরা শিকারীরা সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর, আলোর কোল, কটকা, কচিখালী দুবলা চান্দেরশ্বর, বগি, চরখালী, তালপট্টিসহ যে সকল এলাকায় হরিণের বেশী বিচরণ শিকারীরা সে সব এলাকায় বিভিন্ন ফাঁদ দিয়ে শিকার করে হরিণ।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, সুন্দরবন সংলগ্ন চোর শিকারী চক্র এক প্রচার ফেরী করে বিক্রি করে থাকে হরিণের মাংস। বনরীসহ আইন শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে প্রতি নিয়ত ধরা পড়ছে ফাঁদসহ শিকারীদের কেউ কেউ, উদ্ধারও হচ্ছে বিপুল পরিমান মাংস। হরিণ নিয়ে এমন চিত্র বলে দেয় সুন্দরবনের গহীনেও ভাল নেই অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় এ প্রাণীরা। চোরা শিকারীরা দল বেঁধে বৈধ-অবৈধ উপায়ে সুন্দরবনে ঢুকে গুলি করে, ফাঁদ পেতে অথবা চেতনানাশক ট্যাবলেট দিয়ে ব্যাপকহারে হত্যা করছে সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য সংকটে বাঘ-কুমিরের আক্রমনে মৃত্যুর সাথে যুক্ত বেপরোয়া চোরা শিকারীদের অপতৎপরতায় প্রতিমাসে মারা পড়ছে শত শত হরিণ।
জানাযায়, খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরিপুর, কালিকাপুর, চৌকুনি, তেতুলতলারচর, শেখেরকোনা, মাঠের কোন, ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা, শাকবাড়িয়া, গুড়িয়াবাড়ি, পাতাখালী, জোড়াশিং, গোলখালি, খাশিটানা, গতির ঘেরি, পাইকগাছার, চাঁদখালি, লস্কর, সোলাদানা, পশ্চিম বন বিভাগের সাতীরা রেঞ্জের, শ্যামনগর, উপজেলার গাবুরা, ডুমুরিয়া, ৯নং সোরা, পারশেমারী, চাঁদনী মুখ, জেলেখালী, বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালী, মুন্সী গঞ্জের বিজয় সরদারের ঘাট, মীরগাং, যতীন্দ্র নগর, রমজাননগর, কালিঞ্চী, টেংরাখালী, কৈখালী, জয়খালী, বাগেরহাটের শরনখোলা, সোনাতলা,তফালবাড়ী, চালরায়েন্দা, উঃ তাফালবাড়ী,তালজোড়া, মংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন হরিনটানা, মরাতোলা, তেঁতুলবাড়িয়া, আড়াইবেঁকী, নাওলী জনপদের বহু মানুষ হরিন শিকারের এক প্রকার পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছে হরিণ শিকার।’
ঝামেলা বাঁধলো ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদ পড়ে। ঐ সংবাদের শিরোনাম ‘দুবলার চরে রাসমেলা’ কিন্তু এর বিশদের বেশ কিছু অংশ বিশেষ হুবহু ২০১৩ সালে প্রকাশিত সংবাদটিরই নকলেরই পুনঃপ্রকাশ ‘নাইলনের ফাঁদ, জাল পেতে, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, তীর বা গুলি ছুঁড়ে, কলার মধ্যে বড়শী দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদসহ পাতার উপর চেতনা নাশক ঔষধ দিয়ে নিধন করা হয়ে থাকে বিপুলসংখ্যক হরিণ। শুধু এখানেই শেষ নয়, কোন ফাঁদে হরিণ ধরা পড়লে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানরত শিকারিরা ছুটে গিয়ে আটক হরিণকে লাঠিপেটা করে নিরাপদ দূরত্ব্বে নিয়ে জবাই করে। এরপর চামড়া, শিংসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাঠিয়ে দেয়া হয় উপযুক্ত ক্রেতাদের কাছে। এরপর শুরু হয় মাংস দিয়ে ভুরিভোজের আয়োজন। লন্ডনভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ ও জিওলজিক্যাল সোসাইটির তথ্যমতে, সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি হরিণ শিকারীদের হাতে মারা পড়ে। সুন্দরবনের বনবিভাগের হিসাব মতে, বনের বাংলাদেশ অংশে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রল হরিণ রয়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন চোর শিকারি চক্র এক প্রকার ফেরি করে বিক্রি করে থাকে হরিণের গোস্ত। বনরক্ষীসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে ফাঁদসহ শিকারিদের কেউ কেউ, উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গোস্ত। হরিণ নিয়ে এমন চিত্র বলে দেয় সুন্দরবনের গহীনেও ভাল নেই অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় নিরীহ প্রাণীরা। খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, কালিকাপুর, চৌকুনি, তেঁতুলতলার চর, শেখেরকোনা, মাঠের কোন, ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা, শাকবাড়িয়া, গুড়িয়াবাড়ী, পাতাখালী, জোড়াশিং, গোলখালি, খাশিটানা, গতির ঘেরি, পাইকগাছার চাঁদখালি, লস্কর, সোলাদানা, পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের, শ্যামনগর, উপজেলার গাবুরা, ডুমুরিয়া, ৯নং সোরা, পারশেমারী, চাঁদনীমুখ, জেলেখালী, বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালী, মুন্সীগঞ্জের বিজয় সরদারের ঘাট, মীরগাং, যতীন্দ্র নগর, রমজাননগর, কালিঞ্চি, টেংরাখালী, কৈখালী, জয়খালী, বাগেরহাটের শরণখোলা, সোনাতলা, তাফালবাড়ী, চালরায়েন্দা, উঃ তাফালবাড়ী, তালজোড়া, মংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন হরিণটানা, মরাতোলা, তেঁতুলবাড়িয়া, আড়াইবেঁকী, নাওলী জনপদের বহু মানুষ এক প্রকার পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন হরিণ শিকার।
সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা, পাইকগাছা শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ, নওয়াবেঁকী, কাশিমবাড়ী, বংশীপুর, নুরনগরসহ সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকায় কেজি প্রতি হরিণের গোস্ত পাওয়া যায় মাত্র ৪/৫শ’ টাকায়। এছাড়া তাদের কাছ থেকে একশ্রেণির ব্যবসায়ী গোস্ত কিনে তা বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার করছে দেশের বিভিন্ন জেলা সদরসহ রাজধানীতে। কখনও কখনও তাদের দু’-এক জন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই রয়ে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে বনবিভাগের চেয়ে পুলিশের হাতে মাংস উদ্ধারের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।’ এমন চোখ এড়ানো গাফেলতি এবং নকল চালিয়ে সংবাদ শূন্যতা পূরণের দায় আসলে কার? তাই এই দায়ের মিটমাট মীমাংসায় আমার আগ্রহ বেশ কম।
ফিরে আসি এটিএনের সেই প্রচারিত এক্সক্লুসিভ নিউজে। অবাক হলাম হরিণ হত্যার বিভৎস সব দৃশ্য অবলীলায় কীভাবে প্রচারিত হয়েছে; হরিণের কাটা মাথার মাংস ছাড়াচ্ছে কেউ, হত্যার পর নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে পড়ে থাকা মৃত হরিণ শাবকের শরীরে মাছি উপদ্রব, চামড়া ছড়ানোর নৃশংস দৃশ্য, সেই সাথে ফাঁদ পাতার অভিনব কায়দা। আরেকটি বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম হরিণ শিকারীদের পরিচয় গোপনের স্বার্থে ছবি ঝাপসা করে দেয়া, বিষয়টি অনেকটা এমন যে অপরাধীকে আড়ালে রেখে ভুক্তভোগীকে ফলাও করা। এই ধরণের নির্বুদ্ধিতার অত্যাচারও কম হয়না প্রচারমাধ্যম গুলোতে। নৃশংস দৃশ্যেও ছবি ঝাপসা না করে অপরাধীর ছবি ঝাপসা করা নিশ্চয় সাংবাদিকতার নৈতিকতা ইস্যুতে বড় প্রশ্ন। ঐ নিউজে আরো দেখা যায় হরিণের জন্য ফাঁদ পাততে থাকা একটি দলকে। বিষয়টি বেশ নাটুকে নাটুকে এবং সংবাদের স্বচ্ছতায় প্রশ্ন তুলে। এধরণের অবস্থায় সংবাদ সংগ্রাহকের অবশ্যই উচিত ছিল এমন এক্সক্লুসিভ না করে বরং অপরাধী চক্রের মুখোশ উন্মোচন করা, তাও না পাড়লে অপরাধীদের ধরতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করা। এসব এক্সক্লুসিভ নিউজেরও রয়েছে কিছু অন্দরমহলের খবর; ঢাকায় সংবাদ সংগ্রাহকদেরই কিছু অভিনব সোর্স এসব তথ্য দিয়ে থাকে তা আমরা কম বেশী সকলে জানি, আমার কাছেও আসত এমন তথ্য। এমনকি হরিণের ফাঁদ পাতা শিকারের দৃশ্য দেখারও আমন্ত্রণ পেতাম, সাথে শিকার করা হরিণের। কিন্তু নিতান্ত রুচিগত কারণে এসবে সায় দিইনি কখনও। এখন দেখি এসব ঘটনায় অনৈতিক অংশগ্রহণ সংবাদমাধ্যমে এক্সক্লুসিভ চর্চার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
আরেকটি একই ধরণের নিউজ দেখলাম যমুনা নিউজে। বেশ নাটুকে নিউজ প্যাকেজ। সাহসী সংবাদ সংগ্রাহক ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা করে সুন্দরবনের বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ গুলির শব্দ! অকুতভয় সংবাদ সংগ্রাহক নৌকা থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লেন ঘটনাস্থলে। আমরা শুনছি ‘গভীর সুন্দরবনে গুলির শব্দ শুনেই বনে ঢুকতেই চোখে পড়ে শিকারীদের চলাফেরা’ পরের দৃশ্যে আমরা দেখি মৃত হরিণ কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একজন শিকারী, এরপর শুনি ‘বিশাল এই হরিণটিকে হত্যা করা হয় গুলি করে’। এরপর যথারীতি শিকারীর পরিচয় গোপন স্বার্থে ঝাপসা সাক্ষাতকার, আরো দেখা যায় ফাঁদে পা দেয়া নিরিহ হরিণকে বেধে চলছে হত্যার প্রস্তুতি, দেখানো হচ্ছে ‘ফাঁদ পাতার কৌশল’ এ যেন কর্মশালা। কিন্তু কেন? আমার সাধারণ বোকা প্রশ্ন। উত্তরটি সহজ যেহেতু এ ধরণের সংবাদ করা হয় শিকারী সোর্সের সহযোগিতায় তাই গোপন রাখা হয় তাদের পরিচয়। কিন্তু সংবাদের জন্য এ ধরণের কাজ কতটা নৈতিক? পুরো সংবাদটি দেখলে যেকোনো সাধারণ দর্শক বুঝতে পারবে আকস্মিক গুলির শব্দে কেউ নৌকা থেকে লাফিয়ে শিকারীদের চলাফেরা দেখেনি বরং এমন সংবাদে প্রতিটি পর্যায় পরিকল্পিত। তাহলে সংবাদের স্বচ্ছতা থাকল কোথায়? নিউজ প্যাকেজটির এক পর্যায়ে আমরা শুনতে পাই ‘বিশাল বনে চোরা শিকারীদের ধরাটাও বেশ কঠিন, আর ধরা পড়লেও শাস্তি হয়না বলে উৎসাহ হারাচ্ছে বন বিভাগের কর্মীরা’ ঠিক এরপরই নাম না জানা এক বন কর্মীর স্বীকারোক্তি। আমার আবার একটি বোকা প্রশ্ন জাগে মনে, গুলির শব্দে ভয় না পেয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যে ব্যক্তি সংবাদ সংগ্রহে যান কেন সে এ ধরণের শাস্তিহীন উৎসাহিত অপরাধের অনুসন্ধানে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারেন না? উত্তরও সহজ; এর পেছনে মাথাওয়ালা রাঘব বোয়ালরা আছে। তাই যদি হয় তবে কেন হরিণের নির্মমতা ও বিভৎসতাকে পুঁজি করে এধরণের অস্বচ্ছ সংবাদ উপস্থাপনা অথবা পলন তথাকথিত যশধারী সংবাদ সংগ্রাহক মহলের এক্সক্লুসিভ নিউজের মর্মান্তিক শিকার হয় বনের নিরীহ হরিণেরা?
সোজা বাংলার সাংবাদিকতায় কীভাবে কী হচ্ছে তা আমরা অকপটে প্রকাশ করি; মন খুলে কিংবা উজাড় করে। হয়ত এরই নাম সত্যের প্রকাশ মনে করতে পারে অনেকে। কিন্তু সাংবাদিকতা মাত্র উজাড় করার সত্য প্রকাশ নয় বরং কী অবস্থায় কতটুকু প্রকাশ করার পরিমিতিবোধের নৈতিকতারই বহিঃপ্রকাশ। ফলে অজ্ঞান মনস্ক সাংবাদিকতায় ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মহলে। কিন্তু শুধুমাত্র সাংবাদিকতার প্রথম পাঠটি ধারন করতে পারলে এতটা সমস্যায় পড়তে হতোনা সংবাদ সংগ্রাহকদের।
তারপরও খুব বেশী বিলম্ব হয়নি বলে নূন্যতম আশা রাখি, তাই সংবাদ সংগ্রাহকদের নৈতিক সুস্থতার বিকাশ কামনা করি।
লেখক: ভিজ্যুয়াল জার্নালিস্ট বিবিসি