প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত এবং বাংলাদেশ দুর্যোগ স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে-বললেন আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার)  রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সিভিল-মিলিটারী সমন্বয়ের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিজিওনাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের ৪র্থ সেশন’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে আমাদের দূরদর্শী কাজের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে পারি। বাংলাদেশে আমরা ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে প্রশমন কর্মসূচির উপর গুরুত্বারোপ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সিপিপি মডেল অনুসরণ ও সম্প্রসারণ করেছে। দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমের পরিবর্তে আমরা টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশকে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি-২০১৫ এর মত আন্তর্জাতিক নীতি কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ২৪ লাখ আনসার ভিডিপি সদস্য, ১৭ লাখ স্কাউটস, ৪ লাখ বিএনসিসি এবং গালর্স গাইডের ৪ লাখ সদস্য যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ৩২ হাজার নগর স্বেচ্ছাসেবক এবং ৫৬ হাজার সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে।’

তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এশীয়- প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রতিবেশীদের মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বড় আকারের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের নিবিড় সম্পর্কের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। এ পরিকল্পনার আওতায় আগামী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলাসহ দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘জার্মানওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স-২০১৭’ অনুযায়ী ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এরফলে প্রায় ৫ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এসব দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ম। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পরপর দু’বার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬ষ্ঠ।’

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এবং ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপো, স্টেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড হিউম্যানিটেরিয়ান এসিসটেন্সের পরিচালক জোসেপ মার্টিন এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয় বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয়ের উপপ্রধান সেবাস্টিয়ান রোডস স্ট্যাম্পা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ শাহ কামাল।

অনুষ্ঠানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সামরিক এবং অসামরিক সমন্বয়ের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

এশিয়া এবং প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত