‘উন্নয়নের নামে নদী-খাল-বিল ভরাট নয়’
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৮, ১৪:২৮ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮, ১৬:৪০
উন্নয়নের নামে পুকুর-খাল ভরাট করা যাবে না। শিল্প-কারখানার জন্য অনেক সময় ভরাটের প্রয়োজন হলে বিকল্প জলাধার সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৭ মার্চ (মঙ্গলবার) বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পানির ভূমিকা অনেক। পানির অপর নাম জীবন। জীবজন্তু ও পশুপাখি সবার জন্য পানি প্রয়োজন। গাছপালার জন্যও পানি লাগে। তাছাড়া, কৃষিকাজের জন্যও পানি প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি পায় না। পানির জন্য অনেক দেশেই হাহাকার রয়েছে। আমাদের দেশে তা নেই।’
বর্ষকালের পানি যত বেশি সংরক্ষণ করা যাবে দেশ ততই উপকৃত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এরইমধ্যে ৮৪ ভাগ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য জনসচেতনতার সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গঙ্গার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পানির ব্যবহারে যেন অপচয় না হয়। পানি ব্যবহারে যাতে মিতব্যয়ী হওয়া যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নদীর ড্রেজিং করার কোনও পরিকল্পনা আসে না। আসে নদীর পাড় বাঁধাই, গাছ লাগানো, নদীর পাড়ে চার লেন রাস্তা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের। কিন্তু রাস্তা করার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় রয়েছে।’
নদীগুলোকে রক্ষা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ড্রেজিং করার সময় খেয়াল রাখতে হবে বন্যার পানির জন্য বাঁধ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, আমাদের আরও জায়গা লাগবে। ডুবোচরগুলো যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি সেটা মাথায় রাখতে হবে।
ঢাকার পুকুরগুলোয় দালানকোঠা উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুভার্গ্যজনক পুকুরের মধ্যে দালানকোঠা উঠে গেছে। পুকুরগুলো রাখা দরকার ছিল। খেয়াল করে দেখবেন পুকুর পাড়ের বাতাস অনেক ঠাণ্ডা থাকে। এই পুকুরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমা হয়। আমাদের ভূখণ্ড ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানি যত তোলা হবে পানির স্তর তত ফাঁকা হয়ে যাবে। ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি আমাদেরই হবে।
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীপথে স্টিমার-লঞ্চ চলাচল করে। খাওয়া-দাওয়ার পর বর্জ্য সব নদীতে ফেলা হচ্ছে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রত্যেক বাসে ময়লা ফেলার জায়গা থাকতে হবে। হাসপাতালগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। আবাসিক এলাকায় অনেক হাসপাতাল আছে। কিন্তু হাসপাতালগুরোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এগুলো জ্ঞানী মানুষেরাই করছেন। জ্ঞানী মানুষেরা অনেক সময় অজ্ঞানের মতো কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত, ‘পানির জন্য প্রকৃতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব পানি দিবস ছিল ২২ মার্চ। কিন্তু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় ওইদিন সরকারি কর্মসূচি ছিল। তাই সেদিন পানি দিবস পালন করতে না পারায় আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) সরকারিভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার বক্তব্য দেন।