লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৬, ১৭:৩২

জাগরণীয়া ডেস্ক

ছাতকে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণসহ আনিত বিভিন্ন অভিযোগ ১০ বছরেও প্রতিকার বা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বায়ূ ও শব্দ দূষণসহ একাধিক অভিযোগ তুলে আসছেন এলাকার ভুক্তভোগিরা।

স্থানীয় ফসলী জমি থেকে সংগৃহীত মাটি প্লান্ট অভ্যন্তরে পাহাড়সম করে ডাম্পিংয়ের ফলে আশপাশের বসত-বাড়িতে ফাটল, গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ও এলাকার সবুজ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে লাফার্জ।

ভুক্তভোগী মানুষের এসব অভিযোগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার আগেই লাফার্জের কতিপয় উপকারভোগীরা কৌশলে তা দমিয়ে রাখছে বলে সু-বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, আপত্তির শর্তে ১০ বছরেও কোন প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়নি লাফার্জ কর্তৃপক্ষ। এশিয়ার সর্ববৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা ২০০৬ সালে ছাতকে সুরমা নদীর তীরে নোয়ারাই-টেংগারগাঁও এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এসময় কারখানার প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর সংগ্রহের জন্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসিয়া বনভূমি এলাকায় ১শ‘১৬ হেক্টর খনিজাত ভূমি আর্ন্তজাতিক চুক্তির মাধ্যমে লিজ গ্রহণ করে লাফার্জ। ভারতের খনি প্রকল্প থেকে লাফার্জের অভ্যন্তর পর্যন্ত চুনাপাথর পরিবহনের জন্য স্থাপন করা হয় ১৭ কিলোমিটার স্বয়ংক্রিয় উচ্চ শব্দ বিশিষ্ট কনভেয়ার বেল্ট।

২০০৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু কারখানাটি উৎপাদনে যাওয়ার ৬ মাসের মাথায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানীতে ভারতীয় উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করলে কারখানাটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দু’দফা অভিযোগের দীর্ঘ শুনানীর পর ভারতীয় শীর্ষ আদালত ২০১১ সালের ৬ জুলাই দেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় লাফার্জকে দেওয়া সংশোধিত পরিবেশ বিষয়ক অনুমোদন দিলে, আর্ন্তজাতিক চুক্তির গুরুত্বের কথা বিবেচনায় এনে দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস পর ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এসএইচ কাপাদিয়া লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার পক্ষে রায় প্রদান করেন।

এরপর থেকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু করলেও সিমেন্ট ও ক্লিংকার তৈরির আরও একটি অন্যতম উপাদান মাটি সংগ্রহে নতুন জটিলতায় পড়ে কারখানাটি। কারখানা কর্তৃপক্ষ কৃষি জমি থেকে স্থানীয়ভাবে মাটি সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ সময় কৃষি জমি থেকে মাটি না দেওয়ার পক্ষে স্থানীয় লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায়। কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা তৎকালীন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জহির উদ্দিন আহমদ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এদিকে লাফার্জ সিমেন্ট কারখানায় ডাষ্ট ডিভাইডার ব্যবহার না করায় আশপাশের সবুজ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাটি সংগ্রহের কারণে এলাকার কৃষি জমি ক্রমাগত জলাশয়ে পরিনত হচ্ছে। ১৭ কিলোমিটার কনভেয়ার বেল্টের উচ্চ শব্দের কারণে আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ মারাত্মক শব্দ দূষণে ভুগছেন।

স্থানীয় ফসলি জমির ক্ষতির বিষয়ে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই বোরো ল্যান্ড রিভাইটালাইজেশন প্রকল্পের আওতাধিন কৃষকদের সাফল্য মূল্যায়ন সভা করে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ। সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব জহির উদ্দিন আহমদ ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইয়ামিন চৌধুরী মাটি সংগ্রহের বিষয়টি বিজ্ঞান সম্মত নয় বলে সভায় কঠোর সমালোচনা করেন। সবুজ পরিবেশ, কৃষি জমি রক্ষা ও শব্দ দূষনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হলে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসন করতে পারলেই লাফার্জ ছাতক তথা দেশের জন্য আর্শিবাদ হবে বলে তখন তারা মন্তব্য করেছিলেন।

লাফার্জ সংলগ্ন সুরমা নদীর একটি বিশাল অংশ জুড়ে জেটি নির্মাণ করে অবৈধ নদী শাসন করছে লাফার্জ। এ ছাড়া অতিরিক্ত ডাষ্টের কারণে এর সংলগ্ন সুরমা নদী হারাচ্ছে তার নাব্যতা। বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আশপাশের এলাকার শ’শ’একর ফসলী জমি ক্রমান্বয়ে গিলে খাচ্ছে লাফার্জ সুরমা। 

কারখানার কমিউনিটি রিলেশন কর্মকর্তা শেখ আবুল কালাম স্থানীয় অভিযোগ-আপত্তির বিষয়ে জানান, বিশাল কারখানার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ-আপত্তি থাকা স্বাভাবিক। আমরা যে কোন ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

প্ল্যান্ট ম্যানেজার ই.আর.কিম স্থানীয় সমস্যার বিষয়ে তৎকালীন সময়ে বলেছিলেন, লাফার্জ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে স্থানীয়দের সঙ্গে দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি তারা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের ভূমির মূল্যসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত