ফের ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিচ্ছে লৌহজং নদী
প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৫
গত বছরের শেষের দিকে দখল-দূষণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ থাকায় ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের লৌহজং নদী। উন্নয়ন কাজ থেমে যাওয়ায় নদীটি পুনরায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন একাত্মতায় শুরু হওয়া লৌহজং নদীর দখল-দূষণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজও থেমে যায়। জেলা প্রশাসন, সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপসহ কারোরই লৌহজং নদীর দিকে এখন আর নজর নেই।
জানা গেছে, লৌহজং নদীর জন্ম যমুনার টাঙ্গাইল অংশে, এর প্রবাহও টাঙ্গাইল জেলায়ই সীমাবদ্ধ। নদীটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি দক্ষিণে বাঁক নিয়ে আঁকাবাঁকা পথে দেলদুয়ারের এলংজানি নদীতে গিয়ে মিশেছে। লৌহজং নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ কি.মি, প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদী অববাহিকার আয়তন ১০৪ বর্গ কি.মি। লৌহজং নদী এককালে খুব খরস্রোত ছিল। নদীতে কোন সেতু ছিল না। পশ্চিম এলাকার লোকদের টাঙ্গাইলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হত। নৌকা দিয়ে দু’পাড়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সময় রাতের ঘূর্ণিপাকে পড়ে নৌকা ডুবে যেত।
বর্তমান পার্ক বাজারের কাছে ছিল নৌবন্দর, আম গাছের তলায় একটি ঘাট ছিল বলেই আজকের আমঘাট রোড নাম হয়েছে।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় একসময় এ নদী দিয়েই স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড়নৌকা চলতো। ছিল নৌবন্দর। নদীটি সংস্কার না করায় কালের পরিক্রমায় তার নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়।
বর্ষাকালের ২-৩ মাস এ নদীতে পানির দেখা মেলে। আর অবশিষ্ট সময় এ নদী শুকনো খাঁ খাঁ করে- আবর্জনায় ভরা থাকে। আর এ সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নদী দখলে মেতে উঠেছে। ফলে ক্রমেই এটি সরু খালে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা নদীর যৌবনের কথা ভেবে চোখের অশ্রু ঝরায়। কেউ কেউ অম্ল-মধুর স্মৃতি রোমন্থন করেন। নদীটি কোনদিন দখল-দূষণমুক্ত হতে পারবে, এটা তারা কল্পনাও করেননি। কিন্তু ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন নদীটি দখল-দূষণমুক্ত করে সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যোগী হন।
জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কয়েক মাস যাবৎ লৌহজং নদী দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে শহরে মাইকিং, নদীর ধারে মানববন্ধনসহ ফেসবুকে জনমত গঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বাড়ে জনসম্পৃক্ততা।
জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন একাত্ম হন।
সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দু’পাড় বাধাই করে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণে প্রয়াসী হন। নেওয়া হয় পরিবেশ বান্ধব বিশদ পরিকল্পনা। লৌহজং নদীকে ঘিরে টাঙ্গাইলবাসী নয়া স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও অর্থ বরাদ্দে প্রকল্প গ্রহণ করে।
পরে পদোন্নতি জনিত কারণে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব বদলি হয়ে মন্ত্রণালয়ে চলে যান। বন্ধ হয়ে যায় লৌহজং নদীকে ঘিরে সকল কর্মপরিকল্পনা, স্বপ্নভঙ্গ হয় টাঙ্গাইলবাসীর। ইতোমধ্যে লৌহজং নদীর দু’পাড় বাঁধাইয়ে মাটি খনন ও ভরাটের কাজ বন্ধ রয়েছে, কোন তদারকি নেই। নদীপাড়ের বসতিরা ব্যবহার্য ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছে। পয়ঃনিষ্কাশনের পানিও ফেলা হচ্ছে লৌহজংয়ে। ফলে ধীরে ধীরে আবার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে লৌহজং।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ জানান, লৌহজং নদী খননে একটি ডিজাইন করে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পটি উপর মহল থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে কাজ শুরু করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, এ জেলায় যোগদান করে গুছিয়ে ওঠতে একটু সময় লেগেছে। এরইমধ্যে লৌহজং নদীপাড়ের বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা ফেলতে শুরু করেছে। লৌহজং নদীর কার্যক্রম চালু করার জন্য অচিরেই একটি সভা আহ্বান করা হচ্ছে।
এছাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ড লৌহজং নদী ড্রেজিংয়ের কাজ করবে এবং এলজিআরডি মন্ত্রণালয় ৩৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলে দ্রুত সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও শুরু করা হবে।